রমেক হাসপাতালে যোগদান করেননি নতুন পরিচালক, দাপ্তরিক কাজে স্থবিরতা
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নতুন পরিচালক যোগদান না করায় দাপ্তরিক কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সহকারী সচিব এমকে হাসান জাহিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে গত ২২ আগস্ট ডা. মো. জাফরুল হোসেনকে রমেক হাসপাতালের পরিচালক পদে পদায়িত করা হয়। কিন্তু গত ১৮ দিনেও নতুন পরিচালক যোগদান না করায় অভিভাবক শূন্য হয়ে রয়েছে রমেক হাসপাতাল।
অভিযোগ উঠেছে, নতুন পরিচালক এখন পর্যন্ত কর্মস্থলে যোগদান না করায় এক শ্রেণির দালাল সিন্ডিকেট চক্র আরও বেশি সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসকদের জন্য চিকিৎসা প্রদান এবং রোগীদের চিকিৎসা গ্রহণে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
পাশাপাশি প্রভাব পড়েছে দাপ্তরিত কাজকর্মেও। পরিচালকের তদারকির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা।
ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের পর গত ১০ আগস্ট রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করে গেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন তার কাছে রোগী ও স্বজনরাসহ সচেতন মহলের পক্ষ থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেবা কার্যক্রমের নানান চিত্র তুলে ধরা হয়। এর দুদিন পর ১৩ আগস্ট হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনূস আলীসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে ওএসডি করা হয়। পরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে রমেক হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে ডা. মো. জাফরুল হোসেনকে পদায়িত করা হয়।
এদিকে হাসপাতালে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পদায়িত পরিচালক যোগদান না করায় বিভিন্নভাবে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে তদারকি কমে গেছে। এই সুযোগে দালাল সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ার সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন চিকিৎসকরাও। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিচালকের যোগদানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপসহ হাসপাতালে সুচিকিৎসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি উঠেছে।
সচেতন মহলসহ স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা নিয়োগ। সম্প্রতি হাসপাতালে ফাতেমা বেগম নামে এক প্রসূতির শরীরে ভুল রক্ত দেওয়ায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই নারীর স্বজন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। ১০ আগস্ট রমেক হাসপাতাল পরিদর্শনে আসেন আন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় ফাতেমা বেগমের স্বজনরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের অপসারণ ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তারা।
এর প্রেক্ষিতে ১৩ আগস্ট হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনূস আলী ও সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মজিদুল ইসলাম, আইসিইউ প্রধান ডা. জালাল উদ্দিন মিন্টু এবং ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের প্রধান ডা. জোবাইদা জান্নাতকে ওএসডি করা হয়। এছাড়া গত বছর অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ডা. শরিফুল হাসানের পদত্যাগ দাবি করে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতি। আন্দোলনের মুখে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ওই বছরের ২৩ জানুয়ারি তাকে অন্যত্র বদলি করে।
অন্যদিকে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে সংবাদ সম্মেলন করে হাসপাতালে অবিলম্বে পরিচালক নিয়োগসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। ওইদিন চিকিৎসকদের পক্ষে ডা. মো. রিয়াজ শরীফ লিমন পাঠান ও ডা. মো. আশফাক আহমেদ জামিল সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতাল পরিচালক শূন্য হওয়ায় ছাত্র আন্দোলনে আহত আন্দোলনকারীদের সুচিকিৎসা প্রদানেও ব্যাঘাত ঘটছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসক ও রোগীদের স্বার্থে একজন সৎ, দক্ষ ও আদর্শবান পরিচালক দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগ এবং মেডিকেলের দালাল সিন্ডিকেট উৎখাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও ভান্ডার) ডা. মোহাম্মদ মেজবাহুল হাসান চৌধুরী বলেন, ডা. মো. জাফরুল হোসেনকে রমেক হাসপাতালের পরিচালক পদে বদলি করা হয়েছে বলে আমরা চিঠি পেয়েছি ২২ আগস্ট। কিন্তু তিনি এখন পর্যন্ত যোগদান করেননি। যতদূর জানতে পেরেছি, তিনি রংপুরে যোগদান করতে চাচ্ছেন না। আমরা শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের দাবির বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজরে আনার চেষ্টা করছি।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর