চোখে আলো না ফিরলে কী হবে? থমকে গেছে জসিমের জীবন
অভাবী পরিবারের সন্তান জসিম (১৭)। করোনাকালে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হয় তাকে। তারপর আয়-রোজগারের মাধ্যমে গরিব পরিবারকে সহযোগিতা করার ইচ্ছা থেকে বাবার সঙ্গে প্রতিদিন কাজে যেত সে। কিন্তু শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ডান চোখে গুলি লাগায় জসিমের সেই ইচ্ছা এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার গণমিছিল চলাকালে শেরপুর শহরের থানা মোড়ে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোর সামনের ডান চোখে গুলি লেগে আহত হয় জসিম। এরপর থেকে চিকিৎসাধীন সে।
জসিম শেরপুর সদর উপজেলার শিমুলতলী গ্রামের মো. জিয়াউল হক ও ফরিদা বেগম দম্পতির ছেলে। তার বাবা একজন শ্রমিক, তিনি ঢালাইয়ের কাজ করেন।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৪ আগস্ট চোখে গুলি লাগার পর জসিমকে প্রথমে শেরপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর জামালপুরের একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক তাকে ঢাকায় জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করেন। তারপর থেকে সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।
জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউটে কয়েক দিন আগে জসিমের ডান চোখের একটি অপারেশন হয়েছে। শিগগিরই তার চোখে আরেকটি অপারেশন করা হবে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ওই অপারেশনের পর জানা যাবে জসিমের চোখে আলো ফিরবে কি না।
আরও পড়ুন
জসিমের বাবা জিয়াউল হক বলেন, আমি ঢালাইয়ের কাজ করি। ছেলেটা সহযোগিতা করত আমাকে। গত মাসের ৪ তারিখে শেরপুরে যে আন্দোলন শুরু হয়, সেখানে বন্ধুর সঙ্গে যায়। সেখানে তার চোখে গুলি লাগে। এরপর থেকে জসিমের চিকিৎসা চলছে। এখন আমি তার চিকিৎসার টাকা জোগাড় করব না কাজে যাব সেটি বুঝতে পারছি না। তার চোখে আরেকটি অপারেশন হবে, সেটার পর জানা যাবে চোখ ভালো হবে কি না।
তিনি বলেন, ঢাকায় থাকতে গেলে অনেক খরচ, প্রতি সপ্তাহে তাকে নিয়ে ঢাকায় যেতে হয় ডাক্তার দেখাতে। প্রথমে কয়েকদিন ভর্তি ছিল ঢাকায়, এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে যেতে হচ্ছে।
চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন জানিয়ে জসিমের বাবা বলেন, গ্রামে চার শতাংশ জমি কিনে একটা টিনশেড ঘর করে বসবাস করছি। বাড়ি ভিটার চার শতাংশ জমি ছাড়া আমার আর কোনো সম্পত্তি নেই। কাজের ওপর সব কিছু চলে। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কাজ করি। জসিমও কিছুদিন ধরে আমার সঙ্গে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করছিল। সে আহত হওয়ার পর থেকে আয়-রোজগার সব বন্ধ। ধারদেনা করে প্রায় ৬০ হাজার টাকা এ পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসার পেছনে খরচ করেছি। বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। আমার অনুরোধ, জসিম যাতে সুস্থ শরীরে আগের মতো কাজ করতে পারে সে ব্যবস্থা যাতে সরকার করে দেয়।
আহত জসিম বলে, আন্দোলনের দিন বন্ধুরা মিলে আমরা মিছিলে যাই। মিছিল যখন থানা মোড় অতিক্রম করে তখন গুলি শুরু হয়। আমার সাথের একজনের বুকে গুলি লাগে, আরেকজনের শরীরে বেশ কয়েকটা গুলি লাগে আমার সামনেই। আমার যখন গুলি লাগে তখন আমি পড়ে যাই। এরপর আর কিছু বলতে পারি না। এখন পর্যন্ত ওই চোখ দিয়ে কিছুই দেখতে পারি না।
শিগগিরই চোখে আরেকটি অপারেশন হবে জানিয়ে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন এই কিশোর। জসিম বলে, পরিবারে সহযোগিতা করার মতো আর কেউ নেই। আমরা তিন ভাই বোন। বোন বড়, আমি দ্বিতীয়। তাই বাবার সঙ্গে আমাকে কাজে যেতে হয় সংসারের সহযোগিতার জন্য।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেরপুরের সমন্বয়ক সঞ্জয় বনিক বলেন, আমরা আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিচ্ছি। আমাদের ঢাকায় একজন প্রতিনিধি আছেন সে যেন তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। অসুস্থদের যাতে সঠিক চিকিৎসা হয় সেই ব্যবস্থা আমরা করছি। যেহেতু আমরা ছাত্র, আমাদের কোনো ফান্ড নেই। তবুও আমরা হাসপাতালে তাদের সুচিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কাজ করছি।
মো. নাইমুর রহমান তালুকদার/এসএসএইচ