উত্তপ্ত পীরগাছায় সোমবার হরতালের ডাক
ছাত্র-জনতা ও বিএনপি নেতার পাল্টাপাল্টি মামলা ও কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রংপুরের পীরগাছা। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার নামে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতালের ডাক দিয়েছে পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতি।
এর আগে পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ২২ জনের নামে মামলা করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তারা রাঙ্গার পদত্যাগসহ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার নামে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়। সমাবেশে পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতি সংহতি প্রকাশ করে রাঙ্গার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতালের ডাক দেয়।
এর আগে শনিবার রাতে বিএনপি আহ্বায়কের নামে মামলাটি দায়ের করেন গুলিতে আহত শিক্ষার্থী একরামুল হক। এর এক দিন আগে শুক্রবার ২২ শিক্ষার্থীর নামে মামলা করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। দুটি মামলার বিষয় নিশ্চিত করেছেন পীরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার।
ছাত্র-জনতার মামলায় বিজয় মিছিলে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বাধা প্রদান ও গুলিবর্ষণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম রাঙ্গাকে ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বাদী একরামুল হক মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট সারা দেশের ন্যায় রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল। ওইদিন দুপুর আড়াইটার দিকে স্বৈরশাসক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। এ খবর জানতে পেরে ছাত্র-জনতা বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলটি পীরগাছা সরকারি কলেজের কাছ থেকে পীরগাছা জে.এন মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পৌঁছালে আসামি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা তার চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের ব্যক্তিগত অফিস রক্ষার্থে বিজয় মিছিলকে উদ্দেশ্য করে চার রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন। বাদী তাৎক্ষণিক মাটিতে শুয়ে পড়ায় ও গুলি তার বাম হাতে লাগায় তিনি গুরুতর রক্তাক্ত হন।
এদিন আরও অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জন লাঠিসোঁটা ও অস্ত্রশস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিলে বাধা প্রদান করে। সেই বাধা উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরাসহ বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ছাত্র-জনতার ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে অনেকে আহত হন। এতে ভয়ে ছত্রভঙ্গ হন এবং অনেকে গুলিবর্ষণের সময় প্রাণ বাঁচাতে মাটিতে শুয়ে পড়েন। ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে বিএনপি নেতার গুলিবর্ষণের ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
বাদী একরামুল হক জানান, ওইদিন ঘটনার পর তিনি স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়েছে। তবে বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় ওই বিএনপি নেতাসহ অজ্ঞাত ১৫-২০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে গত শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ২২ শিক্ষার্থীর নামে মামলা দায়ের করেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। এ মামলার প্রতিবাদে শনিবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পীরগাছা থানার সামনের সড়কে বিক্ষোভসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।
বিএনপি নেতার করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সোমবার বিকেল ৪টার দিকে পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে বিজয়ের পর ছাত্র-জনতা লোহার রড, হকিস্টিক, লোহার পাইপ, চাইনিজ কুড়াল, হাসুয়া দ্বারা পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ের তালা ভাঙে। এরপর ১৫ হাজার টাকার কাচের গ্লাস, টেবিল, ৩৫ হাজার টাকার ৪০টি চেয়ার, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ৩২টি সিসি ক্যামেরায় হামলা করা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার পীরগাছা থানায় রব্বানি ওরফে বাবু, শামিম মিয়া, অন্তর মিয়া, শাকিল মিয়া, জুয়েল মিয়া ও শাহিন মিয়াসহ ২২ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ