‘মাইনষে চিড়া-মুড়ি দিছে, আল্লাহ খাওয়াইলে খাই’
লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতি উন্নত হলেও এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি মানুষ। বন্যার ক্ষত এখনো রয়ে গেছে। বাড়িতে পানি ওঠায় অনেকের চুলা জ্বলছে না। অন্যান্য মানুষের মতো বন্যায় বেকায়দায় পড়েছেন বিধবা জাহিদা বেগমও। তিনি বলেন, ‘মাইনষে চিড়া-মুড়ি দিছে, আল্লাহ খাওয়াইলে খাই। আঁর স্বামী নাই। আঁই বিধবা।’
বন্যাকবলিত লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের পশ্চিম দিঘলী গ্রামের বেড়িবাঁধের রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া অসহায় এই নারী বুকের চাপা কষ্টগুলো প্রতিবেদকের কাছে তুলে ধরেন।
জাহিদা বেগম বলেন, ‘আমরা প্রথম বন্যাতেই রাস্তাত উডি (উঠে) গেছি। আংগো (আমাদের) প্রথম বন্যাতেই আঁর (আমার) ঘরো (ঘরে) হানি (পানি)। হিয়ার হরে (তারপরে) হানি টান ধইরছে। হরের (পরের) বার বন্যায় খাট-টাট, লেপ-তোশক সব হানির তলে। কিচ্ছু নাই অন। হরে গরু আর হুত-জি (ছেলে মেয়ে) লই (নিয়ে) রাস্তার ওপর হারি (চলে) আইছি। বড় জি'রতুন খেতা (কাঁতা) একখান বালিশ ওজ্ঞা (একটা) আইনছি। অন ইঁডের (ইটের) ওপর হুতি (শুই)।’
তবে তিনি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত তার তিনটি গরুর খাবার নিয়ে। টানা বৃষ্টিতে প্রথমে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ২৩ আগস্ট থেকে নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরে ঢুকতে শুরু করে। একদিনেই প্রায় ৪-৫ ফুট পানিতে ডুবে যায় লক্ষ্মীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল।
আরও পড়ুন
জাহিদা বেগম বলেন, ‘আঁই ছোডো মোডো হোলাহাইন লই আছি। আঁর হোলা-মাইয়া হাঁচজন (৫ জন)। বড় জি দুগারে বিয়া দি হালাইছি। আছে অন আঁর ভাণ্ডারে তিনজন।’
তিনি বলেন, ‘গরুর খানা লই অন সিদ্ধতে আছি। হুদা খল্লি-ভূষি আর রাস্তারতুন হেন টোগাই লই। আর হেন দি মাই কোন রকম খাবাই হানি মাই মাই। গরুর খানা লই বেশি অসুবিধাতে আছি। গরু লইয়ে বেশি ঝামেলা।’
প্রসঙ্গত, বন্যায় লক্ষ্মীপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে অন্যতম দিঘলী ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের মান্দারী-দিঘলী-দাসেরহাট সড়কটির অধিকাংশ এলাকা প্রথম দিকে কোমড় পানিতে নিমজ্জিত ছিল। পানি নেমে গিয়ে সড়কটিতে এখন ক্ষত চিহ্ন ফুটে উঠেছে। বিভিন্ন অংশে পুকুর সমান গর্ত হয়ে রয়েছে। সড়কটির কয়েকটি স্থানে কোমড় পরিমাণ গর্ত হয়ে তীব্র স্রোতে খালের পানি বিপরীত দিকে নামছে। পুরো সড়কটি যান চলাচলে অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এ সড়কের ওয়াপদা বেড়িবাঁধ (দিঘলী ইউনিয়নের ৫ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকায় ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। শতাধিক পরিবার বেড়িবাঁধের ওপর বাঁশের খুঁটি লাগিয়ে ত্রিপলের ছাউনি দিয়ে বসবাস করছে। প্রায় প্রত্যেকটি পরিবার একপাশে নিজেরা আছেন। অন্যপাশে গরু রেখে লালন পালন করছেন। বেড়িবাঁধের রাস্তাটি একসময় পাকা ছিল। ভেঙে এখন নষ্ট হয়ে আছে। ইটের খোয়াগুলো উঠে আছে। এরমধ্যেই পরিবারগুলো বিছানা পেতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে অসহায়ভাবে রাত্রীযাপন করছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএ