গণহত্যা মামলার আসামি, পারিবারিক দ্বন্দ্বের বলি বিএনপি নেতা
পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে গণহত্যা মামলায় বিএনপি নেতাকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চাপারহাট বাজারে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তোলেন কৃষক দল নেতা মাহা আলম। তিনি ওই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সৎভাই।
সংবাদ সম্মেলনে মাহা আলম বলেন, তার বাবা কমর উদ্দিন মিয়া মৃত্যুর সময় ৩ স্ত্রী ও ১৪ জন সন্তান রেখে মারা যান। পরবর্তীতে তাদের বিশাল সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে পারিবারিক বিরোধ সৃষ্টি। যা নিয়ে একাধিক মামলাও বিচারাধীন রয়েছে। তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্বের ‘মাস্টার মাইন্ড’ তারই সৎ ভাই কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে গোপন আঁতাত করে তার ছোট ভাই শাহা আলমকে স্বেচ্ছাসেবক লীগে যোগদান করান তিনি। সেই ক্ষমতা বলে বিগত সরকারের আমলে হামলা-মামলা দিয়ে অন্য সৎভাইদের হয়রানি করে আসছেন তিনি। সম্পত্তির মামলায় সৎ ভাইদের হয়রানি করে ঘায়েল করতে ব্যর্থ হয়ে এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণহত্যা মামলায় ফাঁসানোর অপচেষ্টা করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন উপজেলা কৃষক দলের সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মহা আলম।
তিনি বলেন, রংপুরে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কাউনিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের উপপরিবেশ-বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুল হাসান মুন্নাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মুন্নার বাবা আব্দুল মজিদকে বাদী করে রংপুর আদালতে ২৯ আগস্ট একটি হত্যা মামলা (১২০০/২৪) করা হয়। এ মামলায় কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষক দল নেতা মহা আলম ও তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আমিনুর রহমানসহ অনেক নিরপরাধ লোককে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় গত ৩ সেপ্টেম্বর বাদী নিজে আদালতে হাজির হয়ে ১২ জন আসামিকে চিনেন না বলে স্বীকার করে মামলা থেকে অব্যাহতির প্রার্থনা করেন। পরে হয়রানি করতে নিরপরাধ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়ায় বাদী আব্দুল মজিদকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক। পরে জামিনে মুক্তিও পান মামলার তিনি। এ সময় বাদী আদালতকে বলেন, শাহা আলম ও রাহানুজ্জামান নামে দুই ব্যক্তি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে এ মামলা করেছেন। এই শাহা আলম কালীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা এবং আমার সৎ ভাই, যোগ করেন কৃষক দল নেতা মাহা আলম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গণহত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ নেতারা নিজেদের বাঁচাতে পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের টেনে বিএনপির নেতাদের আসামি করছে। তাই সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় সোপর্দ করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে দলের দুর্দিনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করা এবং বর্তমানে গোপনে আওয়ামী লীগকে সেল্টার দেওয়া নেতাদের চিহ্নিত করে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান উপজেলা কৃষক দলের সম্পাদক পদপ্রত্যাশী মাহা আলম। সংবাদ সম্মেলনে কৃষক দল, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কালীগঞ্জ বিএনপির কর্মী সমাবেশে বিএনপির আহ্বায়ক চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম মঞ্চে বলেন, এসব পারিবারিকভাবে কোন্দল সৃষ্টি করতে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলার বিষয়ে বিএনপির কোনো নেতা জানেন না।
কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। সংবাদ সম্মেলন করলে এখন সংবাদ করতে হবে, আমাকে প্রশ্ন করতে হবে। এতদিন হাসিনা সরকার অনেক কিছু করেছে তখন কি করেছেন আপনারা? এসব বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
নিয়াজ আহমেদ সিপন/এএমকে