নিজাম হাজারীসহ ৩৫৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
ফেনী পৌরসভার পুরাতন জেল রোডে ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জাফর আহম্মদ (৫৩) নামে এক টমটম চালককে হত্যার ঘটনায় ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে আসামি করে আরও একটি মামলা হয়েছে। মামলায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফেনী-৩ সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান করে ২০৫ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১০০-১০৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে হত্যাকাণ্ডে নিহত জাফরের স্ত্রী আছিয়া বেগম বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
নিহত জাফর সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের ফতেহপুর এলাকার ওবায়দুল হকের বড় ছেলে। ফেনীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ নিয়ে পৃথক আটটি হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ২ হাজার ৯৪১ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- ফেনী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল বশর মজুমদার তপন, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্ল্যাহ, যুবলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু, শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি জানে আলম ভূঁইয়া, ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার। নিহত জাফরকে গুলি করতে প্ররোচনা, উসকানি ও নির্দেশনার অভিযোগে তাদের আসামি করা হয়েছে।
এর আগে মহিপালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক সাতটি মামলায় জেলার অন্তত অর্ধশতাধিক জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়।
মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন, পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন, ছাগলনাইয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মোস্তফা, সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি করিম উল্লাহ বিকম প্রকাশ রেন্সু করিম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন প্রকাশ চামড়া নিজাম, ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর কহিনুর আলম রানা, আমির হোসেন বাহার, লুৎফুর রহামন খোকন হাজারী, বাহার উদ্দিন বাহার, জয়নাল আবেদীন লিটন হাজারী, সাইফ উদ্দিন রুপম, শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী প্রমুখ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট শহরের ট্রাংক রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টমটম চালক জাফর আহাম্মদ অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলনে তার অংশগ্রহণের বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনলাইনে প্রকাশ হয়। ওই দিন শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়াসহ আরও ১০-১১ জন আসামি জাফরের বাড়িতে গিয়ে হত্যার হুমকি দেন। ভয়ে আছিয়া তার স্বামীকে সেদিন বাসায় আসতে নিষেধ করেন। জাফরও তার স্ত্রীর কথামতো সেদিন আর বাসায় যাননি। পরদিন ৪ আগস্ট দুপুরের দিকে জাফরকে ফেনী শহরের পুরাতন জেল রোডস্থ জেলা কারাগারের সামনে পেয়ে ধাওয়া করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে তারা।
স্বজনরা খবর পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাফরকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফেনী মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুশফিকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে এসব ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক আটটি মামলায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমএসএ