আবু সাইদ হত্যায় পুলিশ ও পরিবারের মামলার তদন্ত একসঙ্গে চলবে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট মামলা করেন তার বড় ভাই রমজান আলী। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
এর আগে, আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। সে মামলায় আসামি করা হয়েছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের।
একই সঙ্গে পুলিশ ও নিহতের পরিবারের দায়ের করা এ দুটি মামলার তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) আদালত থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মামলা দুটির তদন্ত একসঙ্গে চলবে বলে আদেশ দিয়েছেন আদালত এবং এর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রংপুর পিবিআইকে।
আদালতের আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, শহীদ আবু সাইদ হত্যার ঘটনায় পুলিশ ইতিপূর্বে তাজহাট থানায় একটি মামলা করে। পরবর্তীতে আবু সাঈদের ভাই রমজান আলী অপর একটি মামলা করেন। উভয় মামলা বর্তমানে পিবিআইয়ের তদন্তে রয়েছে। রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার গত ২৭ আগস্ট দুই মামলার করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা চেয়ে সিএমএম আদালতে আবেদন করেন। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলা দুটি একই তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত এবং একই সঙ্গে তদন্তের আদেশ দেন রংপুরের কোতয়ালী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতের বিচারক।
আদেশে বলা হয়, পিবিআই পুলিশ সুপারকে এই মর্মে নির্দেশ দেওয়া হলো যে, পরবর্তীতে দায়ের হওয়া মামলায় তদন্তের স্বার্থে প্রদত্ত আদেশ প্রতিপালনপূর্বক তদন্ত কার্য সম্পাদন করবেন এবং সুরতহাল ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যা পূর্বোক্ত মামলায় বস্তু সাক্ষ্য হিসেবে সন্নিবেশিত, তার হুবহু কপি অত্র মামলায় বস্তু সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করবেন।
কোতয়ালী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এ আদেশে শহীদ আবু সাইদের ভাই রমজান আলীর দায়েরকৃত হত্যা মামলা চালাতে আর বাধা নেই মর্মে আদেশ হওয়ায় মামলার গতি ফিরে পাবে—এমন আশা প্রকাশ করেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা।
আবু সাঈদ হত্যা মামলার আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামিম আল মামুন, অ্যাডভোকেট রোকনুজ্জামান রোকন এবং অ্যাডভোকেট রায়হান কবির বাদী পক্ষে নিয়োজিত প্যানেলের আইনজীবীরা আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে তদন্ত শেষ করে আসামিদের দ্রুত বিচারের দাবি করেন। এখন পর্যন্ত শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কোনো আসামিকে গ্রেফতার করা হয় নাই বলে জানা গেছে।
দুই মামলার তদন্ত একসঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাড. রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, যেহেতু দুটি মামলাই জিআর। তাই এটির তদন্ত সাংঘর্ষিক হবে না।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, দুই মামলার তদন্ত কীভাবে চলবে, এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত বলেছে দুই মামলার একসঙ্গে তদন্তে বাধা নেই।
এদিকে গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন তিনি।
আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট রংপুর মেট্রোপলিটন আমলি আদালতে হত্যা মামলা করেন তার বড় ভাই রমজান আলী। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—তৎকালীন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুরের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, থানার ওসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের এএসআই সৈয়দ আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে।
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামিম মাহফুজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ, বেরোবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনকে আসামি করা হয়েছে।
অন্যদিকে আবু সাঈদ নিহত হওয়ার ঘটনায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তিন সদস্য বিশিষ্ট তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল। আন্দোলনকারী সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর অনাস্থা পোষণ করায় কমিটির সদস্যরা গত ২০ আগস্ট পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগ করা সদস্যরা হলেন—কমিটির আহ্বায়ক ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মতিউর রহমান, সদস্য সচিব ও বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিকুর রহমান এবং সদস্য ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে