শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আহত ছেলেকে নিয়ে দিশেহারা মা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গিয়ে সরকারি গাড়ির ধাক্কায় আহত মো. সোলাইমান কবিরকে (১৯) নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মা ময়না বেগম। কোমর ভেঙে বিছানা থেকে উঠতে না পারা ছেলেকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
গত ৪ আগস্ট শেরপুর কলেজ মোড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি গাড়ি ধাক্কা দিলে দুইজন নিহতসহ অনেকেই আহত হন। এ ঘটনায় সোলাইমান সেই গাড়ির ধাক্কায় উড়ে যান। সে সময় তাকে শেরপুর উত্তরা হাসপাতালে নিয়ে জান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সোলায়মানের কোমর ভেঙে যাওয়ায় তিনি এখন বিছানা থেকে উঠতেই পারেন না।
আহত সোলাইমান শেরপুরের সদর উপজেলার কামারেরচর গ্রামের প্রবাসী সেলিম মিয়ার ছেলে।
সোলায়মানের মা ময়না বেগম বলেন, আমার ছেলে প্রতিদিন বাসা থেকে বের হয়ে কলেজে যেত আর ক্লাস শেষে বাসায় ফিরতো। ৪ আগস্ট সে ছাত্র আন্দোলন অংশ নেয়। সরকারি গাড়ির ধাক্কায় আমার ছেলে এভাবে আহত হবে তা আমি কখনও ভাবিনি। আমরা আট বছর হলো গ্রাম থেকে এসে শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি। ওর বাবা ১০ বছর থেকে সিঙ্গাপুরে আছেন। আমার তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল। কিন্তু হঠাৎ এমন একটা বিপদ এসেছে যে আমার ছেলে বিছানা থেকে উঠতে পারে না। ডাক্তাররা তার পা টানা দিয়ে রেখে রাখতে বলেছেন। আমার ছেলে একদম নড়াচড়া করতে পারে না। গত চার তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত সে বিছানায় শুয়ে আছে। কোমরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় সে কোনো কিছু করতে পারে না।
তিনি বলেন, আমার ছেলে ২০২৩ সালে শেরপুর আইডিয়াল প্রিপারেটরি স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে এখন সরকারি কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। ওর বাবা দেশে নেই। সংসার চালানো থেকে শুরু করে সবই আমার করতে হয়। এখন ছেলে অসুস্থ কেমনে চলবে সব কিছু চিন্তা হয়। এখন পর্যন্ত চিকিৎসার কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমার ছেলেকে যারা মেরেছে তাদের সঠিক বিচার চাই।
আহত সোলায়মান বলেন, আমার সামনেই আমার দুই ভাই মারা গেছে। সরকারি গাড়ির ধাক্কায় কোনো হর্ন ছাড়াই আমাদের উপরে দিয়ে উঠায় দেয়। আমি সামনে ছিলাম মাহবুব ভাই ও সৌরভ ভাই আমার পিছনে ছিলেন। তারা ওইখানেই মারা গেছেন। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করছেন। তবে আমার শারীরিক অবস্থা খুব বেশি ভালো না। আমার পা-কোমর ভেঙে গেছে। এখন বারান্দায় শুয়ে দিন কাটছে। আমার স্বজন ও বন্ধুরা এসে আমাকে সময় দেন, সাপোর্ট দেন। এ আন্দোলনে অনেকেই আহত হয়েছেন, অনেকে মারা গেছেন। আল্লাহ আমাকে বাঁচায় রাখছে এতেই আলহামদুলিল্লাহ। সরকারি যে গাড়িটি আমাদের ধাক্কা দিয়েছে সেটি এখনও শনাক্ত হয়নি। আমি চাই খুব দ্রুতই এটা বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সোলেমানের বন্ধু ফাহিম বলেন, আমার বন্ধুর ওপর দিয়ে সরকারি গাড়ি উঠিয়ে দিয়েছে তার কোনো বিচার হয়নি। একমাস হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন কোনো কিছু করছে না।
শেরপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মনিরুল হাসান বলেন, সব আহতদের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোকে বলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমরা ওর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। তাদের যদি কোনো সহযোগিতা বা চিকিৎসা ক্ষেত্রে সহায়তা লাগে সেটির ব্যবস্থা করা হবে।
সরকারি গাড়ি ধাক্কায় যারা নিহত বা হয়েছেন তাদের বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আছি। এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। পরবর্তী ডিসি হিসেবে যিনি দায়িত্বে আসবেন তিনি এটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবেন।
মো. নাইমুর রহমান তালুকদার/এফআরএস