মাইকে ঘোষণা দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা না দেওয়ায় ও চাঁদা না দেওয়ায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে ভোলায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের দাবি তার বাড়িতে লুটপাটও চালানো হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট দুপুরে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নীল কমল ইউনিয়নে এই ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার চেয়ারম্যান হলেন ইকবাল হোসেন লিখন। লিখনের দাবি বিএনপি সভাপতি নওরোজ বাবুলের নেতৃত্বে প্রায় ২ শতাধিক লোকজন এ হামলা চালায়।
হামলায় লিখনের স্ত্রী জোবায়েদা খানম, বড় ভাই মো. ফারুক হোসেন ও ছোট ভাই ওয়াহিদুজ্জামান আহত হন।
তবে বাবুলের উল্টো অভিযোগ চেয়ারম্যানের লোকজনই তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় তিনি মামলাও দায়ের করেছেন।
হামলার বিষয়ে ইকবাল হোসেন লিখন বলেন, আমি কোনো দলের এজেন্ট না। আম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে বিএনপি নেতারা আমাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিলো। আমি ইস্তফা দেইনি। এলাকাতেই আছি, জনগণকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আর জনগণকে এই সেবা দেওয়ার কারণেই আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মালতিয়া তার ক্যাডার বাহিনী দুই বার আমার বাড়িতে পাঠিয়ে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে, হুমকি দেয় এবং চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলে। আমি তাদের কোনো দাবি মেনে নেইনি। এতেই আমার ওপর আরও বেশি ক্ষিপ্ত হন তারা।
তিনি আরও জানান, ২৫ তারিখ দুপুরে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আলমগীর মালতিয়া মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রায় দুই শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালায় এবং আমার ঘরে থাকা নগদ প্রায় ১০ লাখ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ ঘরে থাকা মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
একই সময়ে আমার আরও দুই ভাইয়ের ঘরেও লুটপাট চালায় তারা। বাধা দিলে ওরা আমার স্ত্রী ও দুই ভাইকে পিটিয়ে গুরুতর করে
তিনি আরও জানান, আমি জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হামলার বিষয়টি মৌখিকভাবে জানিয়েছি।
মৌখিকভাবে জানালেও এখনও মামলা করেননি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, লুটপাট ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু এর আগেই স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি নওরোজ বাবুল আমাদের নামে মামলা দিয়ে এখন আমাদেরকেই দৌড়ের ওপর রেখেছে।
হামলায় আহত চেয়ারম্যানের স্ত্রী জোবায়েদা বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের বাড়িতে এসে প্রথমে বাসার জানালাগুলো ভাঙতে শুরু করে। সবার হাতেই দেশীয় অস্ত্র ছিল। দরজা ভেঙে তারা আমাদের ঘরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়, পরে ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। আমি বাধা দিলে ওরা আমাকে মারধর করে।
আরও পড়ুন
চেয়ারম্যানের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মালতিয়ার মুঠোফোনে কল দিলে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন কেটে দেন।
নীলকমল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নওরোজ বাবুল হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেদিন আমরা প্রতিদিনের মতোই এলাকায় টহল দিচ্ছিলাম। আমি নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে লিখন চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আমাদের প্রায় ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হন।
ঘটনাটির বিষয়ে চরফ্যাশনের দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকসুদুর রহমান মুরাদ জানান, বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে নীল কমল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন লিখনকে প্রধান আসামি করে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০ জন সহ মোট ৬০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন স্থানীয় বিএনপি সভাপতি নওরোজ বাবুল। তদন্তে সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলার বিষয়ে ওসি বলেন, চেয়ারম্যান থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। আমি শুনেছি তার বাড়িতে হামলা হয়েছে।
এনএফ