নোয়াখালীতে কমতে শুরু করেছে পানি, ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতা
টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে নোয়াখালীতে যে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে, এমন বন্যা দীর্ঘ ৫০ বছরেও দেখেনি এই এলাকার মানুষজন। ভয়াবহ এই বন্যায় এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে প্রায় ২২ লাখ মানুষ। এ ছাড়াও ১৩৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার পানি বৃদ্ধি এতটাই আকস্মিক ছিল, অধিকাংশ পরিবার ঘরের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরানোর সুযোগও পায়নি। এবার ধীর গতিতে হলেও এসব অঞ্চলের পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ভয়াবহ এই দুর্ভোগের মাঝে অনেক এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো কষ্টকর হয়ে উঠেছে, দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকালে বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে তা খুব ধীর গতিতে কমছে। দিনের শুরু থেকে সূর্যের দেখা পাওয়ায় জনমনে স্বস্তি বিরাজ করছে।
জানা যায়, জেলাজুড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ ছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থা না থাকায় দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। ফলে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতা। জেলায় বেড়েছে ডায়রিয়া ও সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা।
মো. সোহেল নামের এক বানভাসি ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় যে পরিমাণ খাল দখল হয়েছে সেগুলো এখনও উদ্ধার হয়নি। যে খালগুলো কিছুটা দখলমুক্ত আছে, তার বেশির ভাগ ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখা হয়েছে। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে সমস্যা হচ্ছে। দখলকৃত খালগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্ধার ও বাকি খালগুলো পরিষ্কার করা হলে বর্তমানে যে বন্যার পানি সেগুলো দ্রুত নেমে যাবে এবং আগামীতে এমন পরিস্থিতির আর তৈরি হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।
ইফতেখার হোসেন নামের আরেক পানিবন্দি ঢাকা পোস্টকে বলেন, সড়কের পাশের বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মানুষজন একাধিকবার ত্রাণ পাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ যাচ্ছে না। মূলত ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গতদের সবার কাছে সমানভাবে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এ জন্য ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সহায়তা চাই।
বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে প্রতিটি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিটি করেছি। সবার সমন্বয়ে আমরা কাজ করছি। আমি নিজে নিজে কোমরসমান পানি পার হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে এসেছি।
বন্যার্ত মানুষজনের জন্য সরকারিভাবে এ পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নগদ ৪৫ লাখ টাকা এবং ১২০৭ মেট্রিক টন চাল। সরকারি এই ত্রাণ পর্যাপ্ত নয় স্বীকার করে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা জেলা প্রশাসন কাজ করছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গম এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ১২০৭ টন চাল, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, ৫ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ৫ লাখ টাকার পশুখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি ত্রাণ প্রতিদিনই বরাদ্দ দেওয়া এবং বন্যার্তদের মাঝে বিলি করা হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী আনা হলেও তারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে নিজেদের মতো করে ত্রাণ বিতরণ করে চলে যাচ্ছে। এতে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় ঠিকভাবে হচ্ছে না।
হাসিব আল আমিন/এএমকে