নেই মুছাপুর স্লুইসগেটের অস্তিত্ব, আতঙ্কে এলাকাছাড়া স্থানীয়রা
বন্যার পানির তীব্র চাপে ভেঙে যাওয়া নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মুছাপুর স্লুইসগেটের কোনো অস্তিত্ব নেই। তীব্র স্রোতে তা সাগরে ভেসে যায়। এদিকে আতঙ্কে এলাকাছাড়া হচ্ছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ফেনীর সোনাগাজী, দাগনভূঁইয়া ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপকূলে অব্যাহত নদী ভাঙন ঠেকাতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে ‘নতুন ডাকাতিয়া ও পুরাতন ডাকাতিয়া ছোট ফেনী নদীর পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের’ আওতায় কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুরে ২০০৫ সালে প্রথম ১৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩ ভেন্টের রেগুলেটর নির্মাণ শুরু হয়। ২০০৫ সালের ৮ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। রেগুলেটরের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ২৩টি ভেন্টে ২৩টি করে রেডিয়্যাল গেট ও ফ্ল্যাব গেট স্থাপন করা হয়। এ রেগুলেটরের পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা ৭৫৬.১৫ ঘনমিটার/সেকেন্ড এবং এর পানি ধারণ সমতল (+) ৪.০০ মিটার (পিডব্লিউডি)।
সোমবার (২৬ আগস্ট) সকালে বন্যার পানির তীব্র চাপে মুছাপুর স্লুইসগেট ভেঙে যায়। তারপর থেকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলের দিকে ছুটছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশরাফ উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী গঠনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম পারভেজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমুদ্রের দিকে পানির তীব্র স্রোত রয়েছে। এখানে যে একটা স্লুইসগেট ছিল তার অস্তিত্বও নেই। সাধারণ মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আশপাশে ভেঙে যাচ্ছে। তাই যে যার মতো নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন।
মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এলাকার মানুষ কান্নাকাটি করছে। তারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে ক্লোজারের আশপাশে বসতি স্থাপন করেছিল। পর্যটন শিল্পের বিকাশে এর অবদান ছিল। অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এখানে বেড়াতে আসতো। এতে করে অর্থনীতির চাকা সচল থাকতো। স্লুইসগেটটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় সবার ভেতর ভয় ডুকে গেছে। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলমান বন্যার পানির প্রচণ্ড চাপের কারণে মুছাপুর রেগুলেটরটি কল্যাপস করেছে। রেকর্ড ভঙ্গকারী বৃষ্টিপাতের কারণে উজান থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি আসে ও দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করে এবং কাঠামোর উজান ও ভাটিতে পানি স্তরের পার্থক্য, ডিজাইন পার্থক্যের চেয়ে অনেক বেশি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পানির চাপে রেগুলেটরটি কল্যাপস করে। রেগুলেটরটি কল্যাপস করার ফলে উজানের বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশনে কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি আরও বলেন, রেগুলেটরটি সন্দ্বীপ চ্যানেল হতে ৬৫০ মিটার দূরে অবস্থিত। রেগুলেটরের ভাটিতে কোনো লোকালয় না থাকার কারণে জন-বসতির কোনো ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে সামদ্রিক ঘূর্ণিঝড় বা উঁচু জোয়ারের সময়ে ডাইভারশন চ্যানেল দিয়ে লবনাক্ত পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারে যা পরবর্তীতে ভাটার সময়ে পুনরায় ডাইভারশন চ্যানেল দিয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেলে নিষ্কাশিত হবে। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে, এই ধরনের আশঙ্কা নেই।
হাসিব আল আমিন/আরকে