খুলনায় পানিবন্দি ১৩ গ্রামের মানুষের দুর্বিষহ জীবন
খুলনার পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হওয়ায় দুর্বিষহ দিন কাটছে পানিবন্দি ১৩টি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষের। ইউনিয়নের কালীনগর গ্রামে ভদ্রা নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধের স্থানে রিং বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করছেন হাজারও মানুষ। তবে গত তিন দিন ধরে শত চেষ্টা করেও ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত সম্পন্ন করতে পারেনি গ্রামবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে খুলনা বিএনপি, খুলনা ব্লাড ব্যাংক, উই বাংলাদেশ, ইদ্দিখার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পাইকগাছায় পানিবন্দি মানুষের কাছে ত্রাণ নিয়ে ছুটছেন।
অসংখ্য চিংড়ি ঘের ও ফসলি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে আছে। ফলে ঘরবাড়ি ছেড়ে কেউ আশ্রয় নিয়েছেন পাকা উঁচু সড়কে, আবার কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে। কেউ কেউ রয়ে গেছেন পানিবন্দি ঘরেই। রান্না করতে পারছে না বেশিরভাগ পরিবার।
বাঁধ ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দা নয়ন মন্ডল বলেন, তিন দিন ধরে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছেন, তবে কাজে আসছে না। দুটি ভেকু মেশিন দিয়ে কাজ চলছে। মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে। তবুও জোয়ারের সময় পানির চাপে আবারও ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ। এখানে অন্তত পাঁচটি ভেকু মেশিন প্রয়োজন, তাহলে দ্রুত বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হবে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে উপকূলবাসীর জন্য ভালো হয়।
তিনি আরও বলেন, ভাঙা বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। অনেক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে সর্বহারা হয়েছে অনেকেই। মানুষ সড়কের পাশে অবস্থান নিয়েছেন। বৃষ্টিতে আরও কঠিন অবস্থা এখানে।
তিনি বলেন, গ্রামের ভেতরের দিকের পানিবন্দি মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। কালিনগর উদায়ন স্কুলের সামনের দিকে অনেক পরিবার আছে সেখানে শুকনা খাবারের প্রয়োজন। ভেতরে রাস্তা খারাপ, তাই তেমন কেউ আসছে না। সহযোগিতা যদি কেউ করতে চায় তাহলে একটু ভেতরের দিকে এসে যেন মানুষের পাশে দাঁড়ায়।
দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মণ্ডল বলেন, কালীনগর, দারুল মল্লিক, হরিণখোলা, সৈয়দখালি, সেনেরবেড়, গোপীপাগলা, খেজুরতলা, তেলিখালী, হাটবাড়ী, ফুলবাড়ী, বিগরদানা, দুর্গাপুর ও নোয়াই গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। প্লাবিত হয়ে ফসল ও কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে চিংড়িঘের ও পুকুরের মাছ। হাজারও মানুষ রিং বাঁধ তৈরির কাজ করছেন। কিন্তু এখনও কোনো কূলকিনারা করতে পারিনি। এই এলাকায় কোনো সাইক্লোন শেল্টার নেই। আশপাশের উঁচু সড়ক ও স্কুলগুলোতে মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা বারবার এভাবে ডুবে যেতে চাই না। আমাদের একটাই দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ বলেন, ৯৫০ হেক্টর আমন ধান ক্ষেত, ২২৫ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা ও ২৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, প্রায় ৪০০টির মতো চিংড়ি ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ফুট পানি বেড়েছে। সে কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। দুটি এস্কাভেটর দিয়ে মাটি কেটে রিং বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। শত শত মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। জিও টিউব দিয়ে বাঁধ মেরামত করা হবে।
এদিকে ১ হাজার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২ টন চাল, নগদ ৫৫ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনিন জানান, বাঁধ এখনও সম্পূর্ণ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। পানিবন্দি হয়ে যাচ্ছে ১৩টি গ্রামের ১৪ হাজারের বেশি মানুষ।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নম্বর পোল্ডারের কালীনগর গ্রামের রেখামারী খালের গোড়ার দিকের এলাকায় ভদ্রা নদীর তীরের প্রায় ২০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। তবে ভাঙনের অংশ বাড়ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
মোহাম্মদ মিলন/এএমকে