চতুর্থবারের মতো বন্যার কবলে বাঘাইছড়ি
টানা পাঁচ দিনের অতি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মাত্র ১৮ দিনের ব্যবধানে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল আবারও প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে চতুর্থবারের মতো বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বাঘাইছড়ি পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম।
মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেল থেকে উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট-মাচালং সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সাজেকের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সাজেকে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি ডুবে যাওয়ায় পানি না কমা পর্যন্ত আটকা থাকবেন সেখানে বেড়াতে আসা দুই শতাধিক পর্যটক। একই সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা উপজেলা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা সড়ক প্লাবিত হওয়ায় বাঘাইছড়ির সঙ্গে সড়ক পথে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
ভারী বর্ষণের কারণে মঙ্গলবার দুপুর থেকে কাচালং নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে এবং মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকে উপজেলার রূপকারি ইউনিয়ন, বঙ্গলতলী ইউনিয়ন, সাজেক ইউনিয়ন, মারিশ্যা ইউনিয়ন, বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন, খেদারমারা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলসহ পৌরসভার পুরাতন মারিশ্যা, মাস্টার পাড়া, ঢেবার পাড়া, মধ্যমপাড়া, পশ্চিম মুসলিম ব্লক, কলেজ পাড়া, মুসলিম ব্লক, মাদরাসা পাড়া, হাজি পাড়া, বাবু পাড়া, এফ ব্লক, কাচালং বাজার, বটতলী, লাইল্যা ঘোনাসহ ২০টিরও অধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ।
এ বছর ঘূর্ণিঝড় রিমেল ও মৌসুমি প্রভাবে সৃষ্ট মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো এবারসহ চার দফায় প্লাবিত হয়েছে এতে ভোগান্তির শিকার হাজার হাজার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আবহাওয়া পরিস্থিতি উন্নত না হলে যেভাবে পাহাড়ি ঢলের পানি আসতে শুরু করছে তাতে গোটা বাঘাইছড়ি উপজেলা তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা বিগত দিনের বন্যার ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে যাবে। গরু-ছাগল, হাস-মুরগি, শিশু, বৃদ্ধা ও রোগিদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বন্যাকবলিতরা।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আক্তার বলেন, চার দফায় বন্যাকবলিত বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ৫৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে, ইতোমধ্যে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন। পানিবন্দি লোকজনদের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাঘাইছড়ি উপজেলা চলতি বছরে এখন পর্যন্ত চারবার বন্যার কবলে পড়ে। যার মধ্যে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতে কাচালং নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রথমবার এই অঞ্চলের মানুষ বন্যার মুখোমুখি হয়। এর পর জুন মাসের শেষের দিকেও একবার বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়। জুলাই মাসের প্রথম দিকে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আবারও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয় বন্যার পানিতে। সর্বশেষ আগস্ট মাসে আবারও বন্যাকবলিত হলো এই উপজেলা।
মিশু মল্লিক/এএমকে