তোপের মুখে রংপুরে কলেজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে রংপুর কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনকে পদত্যাগে বাধ্য করালেন বর্তমান-প্রাক্তন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর তিনি তোপের মুখে পড়ে পদত্যাগপত্রে সই করেন। এ সময় তার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
বুধবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বেলা ১২টার দিকে অধ্যক্ষের কক্ষে গিয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতি প্রদানে বৈষম্য, অবৈধভাবে বেতন উত্তোলন, শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা, আর্থিক অনিয়মসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৈধ কাগজপত্র প্রদানের জন্য অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীনকে আধা ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। আধা ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগের বিপরীতে কিছু কাগজপত্র দেখাতে অধ্যক্ষ সক্ষম হলেও সব অভিযোগের বিপরীতে তাৎক্ষণিক কাগজপত্র দেখাতে না পারায় শিক্ষার্থীরা পদত্যাগের জন্য বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় কাগজ, ডিম দিয়ে অধ্যক্ষকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়েন শিক্ষার্থীরা।
অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন অভিযোগের বিপরীতে কাগজপত্র দেখানোর জন্য সময় চাইলে শিক্ষার্থীরা সময় দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর এক পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের কার্যালয়ে ঢুকে অধ্যক্ষের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করে এবং তাকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে সই করাতে বাধ্য করে।
পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের দাবির প্রেক্ষিতে কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তার অবর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন প্রতিষ্ঠানের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আলিউল কবির প্রামাণিক। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী জুতার মালা অধ্যক্ষের গলায় ছুড়ে মারেন এবং ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় কিছু শিক্ষার্থী মঞ্জুয়ারার দিকে ডিম ছুড়ে মারেন।
কলেজ ক্যাম্পাস ত্যাগ করার আগে অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা পারভীন সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা দেখলেন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও প্রাক্তন কিছু শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কুচক্রী মহল অনৈতিক সুবিধা হাসিল করতে না পেরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে আমাকে পদত্যাগপত্রে জোরপূর্বক সই করিয়েছে। একজন শিক্ষকের প্রতি সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের আচরণ দেখে আমি হতভম্ব হয়ে পড়েছি। দেশের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একটি মহল ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএমকে