আ. লীগ হিন্দুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায় : মির্জা ফখরুল
আওয়ামী লীগ যখন জনগণের সামনে দাঁড়াতে পারে না তখন হিন্দুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। এটা হচ্ছে তাদের একটি হিংস্র খেলা। যখন তারা আন্দোলনে হেরে যায় তখনই তারা বলবে, হিন্দু ভাইদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে জেলা বিএনপি আয়োজিত ঐক্য ও সম্প্রীতির সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমার মা-বোনেরা আছেন, দাদারা আছেন, তারা ভালো করেই জানেন এখানে হিন্দু-মুসলমান এক সঙ্গে থাকে। এখানে কখনো যুদ্ধ হয় না। হাজার বছর ধরে এই মাটিতে, এই বাংলাদেশেই আমরা হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান একসঙ্গে একটি গাছে ফুলের মতো হয়ে রয়েছি। হিন্দুদের দুর্গাপূজায় আমরা যেমন যাই, আমাদের ঈদেও তারা আসে। আওয়ামী লীগ হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে একটি বিদ্বেষ ছড়াতে চায়। গতকাল পর্যন্ত আমার কাছে ১০টি বিদেশি টেলিফোন ইন্টারভিউ করেছে। আমাদের কথা পরিষ্কার—রাজনীতি যখন পরিবর্তন হয় তখন একটি তাণ্ডব হয়, ধর্মীয় নয় এটা রাজনৈতিক।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘসময় পর স্বৈরশাসনের পতন ঘটিয়ে ছাত্ররা যে মুক্তির পথ দেখিয়েছে, সে পথে সম্প্রতির বন্ধনে থেকে চলার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে থেকে একে অপরের বিপদে পাশে দাঁড়ানোরও আহ্বান করেন তিনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পটভূমি সংক্ষেপে তুলে ধরেন। বলেন, এর আগে আমি বলতাম, আমাদের দেশের সেই তরুণ-যুবকরা কই? যারা ৫২’র ভাষা আন্দোলনে, ৬৯, ৯০-এর গণ-অভ্যূত্থানে দেশকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিল। আপনারাই সেই ছাত্র-তরুণ-যুবক। এ সময় মুগ্ধ ও সাঈদসহ অন্যান্য নিহতদের কথা স্মরণ করে অশ্রুশিক্ত হতে দেখা গেছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম, দেশে জনগণের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে পালানোর পথ থাকবে না। তাই হয়েছে। শেখ হাসিনাকে অবশেষে দিল্লিতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। আমেরিকা, ব্রিটেন কেউ তাকে রাখতে চায় না। ভারতও অফিসিয়ালি এখনো কিছু বলেনি। আমরা জানি, তিনি ভারতে আছেন। তিনি বলেন, যখন সব পথ বন্ধ তখন হিন্দু ভাইদের এখন সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন।
বিদেশি গণমাধ্যমগুলো আমাদের কাছে জানতে চাইলে আমরা স্পষ্ট বলেছি, যখন দীর্ঘদিন পর একটা স্বৈরাচার সরকারের পতন হয় তখন একটু সমস্যা হয়। এটা কোনো সাম্প্রদায়িক সমস্যা নয়। এটি রাজনৈতিক।
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। তারা সঠিক সময়ে মানুষের প্রয়োজনে মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনার দুঃশাসনের আমলে বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় অনেক নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই আন্দোলনে শত শত ছাত্র-জনতা খুন হয়েছে, আহত হয়েছে। সবশেষে শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে দিয়ে মানুষ হত্যা করাতে চেয়েছিল দাবি করে ফখরুল বলেন, সেনাবাহিনী তাকে জানিয়েছে, আমরা আমাদের ভাইদের ওপর গুলি চালাতে পারব না। সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ।
এ সময় হিন্দু-মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থেকে একে অপরের বিপদে-আপদে পাশে থাকার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ সব অপরাধীর বিচার দাবি করে স্লোগান দেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, ঠাকুরগাঁও জেলা যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মোহাম্মদ আবুনুর, ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েসসহ জেলা বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আরিফ হাসান/এএমকে