নোয়াখালীতে ৪ স্তরে গ্যাসের সন্ধান, প্রতিদিন মিলবে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট
গ্যাস অনুসন্ধান ও কূপ খননে আরেকটি সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস প্রতিষ্ঠানটি এবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ৪নং কূপের খনন শেষে চারটি স্তরে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে।
সোমবার (১২ আগস্ট) রাতে কূপ পরীক্ষণ শুরু হয়। এতে গ্যাস ক্ষেত্রের ৪নং কূপের খনন শেষে খবর মিলেছে চারটি স্তরে গ্যাস প্রাপ্তির।
এদিকে এ খনিজ সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের নিশ্চয়তা চান এলাকার মানুষ। একই সঙ্গে গ্যাসভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠলে কর্মসংস্থান হবে জেলার বেকার যুবকদের।
জানা যায়, ‘দেশের অর্থনীতি ও শিল্পায়নকে আরও গতিশীল করতে আমাদের বাড়তি গ্যাস প্রয়োজন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে মানুষের চাহিদা পূরণে দেশীয় জ্বালানি অনুসন্ধান ও উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার। ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ৪৬টি নতুন অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও ওয়ার্কওভার কূপ খনন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাপেক্স বলছে, এটির আগে নোয়াখালীর এ অঞ্চল তথা বেগমগঞ্জে ১৯৭৬ সালে প্রথম গ্যাস কূপের সন্ধান মেলে, ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় কূপের সন্ধান মিললে সেগুলো খনন করা হয়। তবে পরবর্তীতে ওই দুটি কূপে কোনো গ্যাস পাওয়া যায়নি। ২০১৩ সালে তৃতীয় কূপের সন্ধান মিললে খনন থেকে গ্যাস উৎপাদনে যায় এবং ২০১৮ সালে একই কূপে ওয়ার্কওভার (আক্রমণাত্মক কৌশল) চালিয়ে এখন প্রতিদিন ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। বেগমগঞ্জ-৪ (ওয়েস্ট) মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ থেকে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। বাপেক্সের দুই শতাধিক প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক এ কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত রয়েছে।
গ্যাসকে কাজে লাগিয়ে শিল্প কারখানা এবং আবাসিক লাইনে ব্যবহারের দাবি এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা মোরশেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা চাই গৃহস্থালির কাজে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হোক। নোয়াখালীর গ্যাসের মাধ্যমে নোয়াখালীর উন্নয়ন সম্ভব। গ্যাসের সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে জেলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকার যুবকদেরও কর্মসংস্থান হবে। একটি উন্নত সমৃদ্ধ জেলায় পরিণত হবে নোয়াখালী।
বেগমগঞ্জ-৪ (ওয়েস্ট) মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ খনন অধিকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কূপের প্রতিটি স্তরে কী পরিমাণ গ্যাস মজুত রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা করা হবে। গত ২৯ এপ্রিল জেলার সোনাইমুড়ী উপজলায় অম্বরনগর ইউনিয়নের ওয়াছেকপুর গ্রামে কূপটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই খনন কাজ শেষ করে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কূপটির ৪টি জোনের প্রতিটি জোনে প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে বাখরাবাদের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করা যাবে বলে আশা করছে বাপেক্স।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আল হেলাল প্রিন্স ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০২২ সালের ২৫ এপ্রিল প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে সাড়ে ৫ একর ভূমি হুকুম দখল করা হয়। ২০২৩ সালে ডিসেম্বরে অবকাঠামো তৈরি এবং ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল রিগ নিয়ে আসা হয় এবং ২২ এপ্রিল স্থাপন করা হয়। আমরা চারটি লেয়ারে গ্যাসের সম্ভাব্যতা পেয়েছি। ধারণা করছি প্রতিদিন ১০ মিলিয়ন হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যাবে। সকল কাজ শেষে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জাতিকে একটা ভালো খবর দিতে পারবে বলে আশা করছে বাপেক্স।
হাসিব আল আমিন/আরেক