‘পড়াশোনা শেষে আমাকে অবসর দেবে বলে ছেলেটা চিরতরে অবসরে চলে গেল’
‘আমার ছেলে রিজভীর স্বপ্ন ছিল চাকরি করবে। তারপর পরিবারের হাল ধরবে। প্রায়ই সে আমাকে বলতো, পড়াশোনা শেষে অবসর দেবে। আমাকে অবসরের কথা বলে ছেলেটা চিরতরে অবসরে চলে গেল। আমার রিজভী আর নেই।’
কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা পোস্টকে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ১৮ জুলাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত নোয়াখালীর তরুণ মাহমুদুল হাসান রিজভীর (২০) বাবা জামাল উদ্দিন। তিনি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।
ছেলেকে হারিয়ে শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন মা ফরিদা ইয়াসমিনও। জ্ঞান ফিরলেও সন্তানের শোকে স্তব্ধ হয়ে থাকেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি তো ছেলের অসুস্থতার কথা শুনে ঢাকায় ছুটে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, আমার ছেলের লাশ। আমি তো লাশ আনতে ঢাকা যাইনি। আমি তো গেছি ছেলেকে সুস্থ করতে। এখন আমি কীভাবে আমার ছেলেকে ছাড়া থাকব? আমার ছেলের কী অপরাধ ছিল? আমাকে কেন সন্তানহারা হতে হলো? আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
মাহমুদুল হাসান রিজভীর বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের চর কৈলাশ এলাকায়। তার বাবা-মা ও ভাই-বোন বসবাস করেন নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর বার্লিংটন এলাকায়। নিহত রিজভীর নানার বাড়ি হাতিয়া উপজেলার হরণী ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে। সেখানেই তার মরদেহ গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় দাফন করা হয়।
আরও পড়ুন
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাহমুদুল এসএসসি পাস করেন মাইজদীর পৌর কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। তারপর লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ইলেকট্রনিকস বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করেন। চলতি মাসেই ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ শুরু করেন মাহমুদুল। ২ জুলাই মা ফরিদা ইয়াসমিন তাকে মেসে তুলে দিয়ে আসেন। মেসে তিন সহপাঠীসহ থাকতেন মাহমুদুল।
মাহমুদুল হাসান রিজভীর মামা আজিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যার দিকে মেসের চার বন্ধুকে নিয়ে নাশতা করতে বের হয়েছিল। উত্তরা এলাকার রাজলক্ষ্মীর দিকে যেতেই হঠাৎ গুলির শব্দ আসতে শুরু করে। এ সময় বন্ধুরাসহ সে আত্মরক্ষায় পালানোর চেষ্টা করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি গুলি লাগে রিজভীর মাথায়। পরে তাকে আহত অবস্থায় স্থানীয় ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায় তার বন্ধুরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
রিজভীর মা ফরিদা ইয়াসমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২ জুলাই আমার ছেলেকে আমি একটা মেসে তুলে দিয়ে এসেছি। মেসে তিন সহপাঠীসহ থাকতো রিজভী। গত ১৮ জুলাই দুপুরে তার সঙ্গে মুঠোফোনে আমার কথা হয়। সে আমাকে জানিয়েছিল, তার মেসে মাছ-তরকারি কিছুই নেই। তিন দিন ধরে মেস থেকে বের হতে পারছেন না। পরিস্থিতি দেখে সন্ধ্যায় নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। মোবাইল ফোনে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা না যেতেই ছেলের এক সহপাঠী ফোন দিয়ে বলেন, মাহমুদুল অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ঢাকায় গিয়ে দেখি আমার ছেলের মরদেহ মর্গে পড়ে আছে।
রিজভীর পৌর কল্যাণ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ম. পানাউল্যাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রিজভী ২০২০ সালে এসএসসি পাস করে। এরপর লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিট থেকে ডিপ্লোমা শেষে ঢাকার উত্তরায় একটি প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করছিল। তার এমন মৃত্যুর সংবাদে মর্মাহত হয়েছি।
হাসিব আল আমিন/আরকে