সুনসান কুয়াকাটায় লোকসান গুনছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা
দেশের চলমান অস্থিরতায় অর্থনৈতিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন শিল্প। পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। চারদিকে সুনসান নীরবতা। নেই মানুষের কোলাহল। বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ রেস্টুরেন্ট। খালি পড়ে আছে আবাসিক হোটেল-মোটেলের রুম। এতে বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
তবে, দেশের এই অস্থিরতা কেটে গেলে পর্যটক বাড়ার আশা ব্যক্ত করেছেন তারা। এদিকে পর্যটকশূন্য থাকলেও সৈকত এলাকাসহ কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানগুলোতে লক্ষ করা গেছে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) সরজমিনে দেখা যায়, সৈকতের পূর্ব এবং পশ্চিম পাশের ফ্রাইয়ের দোকান, চটপটির দোকান এবং কসমেটিক্সের দোকানগুলোতে ঝুলছে তালা। সৈকতের ছাতা ও বেঞ্চ গুটিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। সৈকতের জিরো পয়েন্ট, চৌরাস্তা, গঙ্গামতি, লেম্বুরবন, ইলিশ পার্ক, শুটকি মার্কেট, ব্লক পয়েন্টসহ অধিকাংশ দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকশূন্য। জিরো পয়েন্ট এলাকায় দেখা যায়, বেশ কয়েকজন দোকান খোলা রাখলেও নেই কোনো ক্রেতা। চারদিকে তাকালে মনে হয় জনমানবশূন্য এলাকা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে কুয়াকাটায় আটকা পড়া পর্যটকরাও ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কুয়াকাটা ছেড়েছেন। এখন পুরোপুরি পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কুয়াকাটা। এতে বেকার হয়ে পড়েছে ১৬ পেশার পাঁচ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী।
কুয়াকাটা হোটেল খান প্যালেসের জেনারেল ম্যানেজার মো. ফয়জুল করিম ইমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হোটেলে আমরা ২৭ জন কর্মচারী, বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য খরচসহ দৈনিক প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আমার হোটেলে ৫৮টি রুম রয়েছে। প্রতি বৃহস্পতিবার, শুক্র ও শনিবারের জন্য ৪-৫ দিন আগে বুকিং হয়ে যেত প্রায় ৭০ শতাংশ রুম। কিন্তু গত এক সপ্তাহে পুরোপুরি ফাঁকা আরও কতদিন লাগবে তা নিয়ে আমরা দুশ্চিতায় রয়েছি।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এমএ মোতালেব শরীফ বলেন, কুয়াকাটায় প্রায় ২০০টির বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে। গড়ে তৃতীয় ও দ্বিতীয় শ্রেণির প্রতিটি হোটেলগুলোতে সপ্তাহে লাখ টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির মুখে হোটেল মালিকরা। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, আমরা মূলত ট্যুর অপারেটর ও ঢাকার বিভিন্ন এজেন্সির পাঠানো পর্যটকদের গাইড করে থাকি। গত এক সপ্তাহ যাবৎ আমাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় ৫০ জন গাইড বেকার সময় কাটাচ্ছে। সামনে আরও কতদিন এভাবে থাকতে হবে সেটাও অনিশ্চিত।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিয়নের পুলিশ সুপার আনসার উদ্দিন বলেন, আন্দোলন ও কারফিউ চলাকালীন তেমন বেশি পর্যটন নেই কুয়াকাটায়। গত কয়েকদিনে আটকে থাকা পর্যটকদের আমরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে নিজ গন্তব্যে পাঠাতে পেরেছি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায়। এখনও সার্বিক খোঁজ খবর রাখছি। তবে এই মুহূর্তে কুয়াকাটা পুরোপুরি পর্যটকশূন্য থাকলেও আমাদের টহল ও নজরদারি রয়েছে পুরো এলাকাজুড়ে।
এসএম আলমাস/আরকে