সাড়ে ৬ মাস পর জানা গেল স্বামীর হাতে খুন হয়েছিলেন নিলুফার
রংপুরের বদরগঞ্জে নিলুফা ইয়াসমিন (২৯) নামের এক গৃহবধূর মৃত্যুর সাড়ে ছয় মাস পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা গেল তিনি আত্মহত্যা করেননি, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় গৃহবধূর স্বামী সহিদার রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান। এর আগের দিন রাতে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার সঙ্গে জড়িত কথা স্বীকার করেন সহিদার রহমান।
গ্রেপ্তার সহিদার রহমান উপজেলার ছোট হাজীপুর তেলিপাড়া গ্রামের আব্দুল হাই মেম্বারের ছেলে।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান জানান, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সহিদার স্থানীয় বাজারে নাইট গার্ডের ডিউটি শেষে ভোরে তার নিজের বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়েন। নিলুফা দুপুরে স্বামী সহিদারকে ঘুম থেকে একাধিকবার ডেকে গরুকে পানি খাওয়ানোর জন্য বলেন। এতে সহিদার বিরক্ত ও রাগান্বিত হয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট ধরে নিলুফার গলা টিপে ধরে রাখেন। এতে নিলুফা নিস্তেজ হয়ে পড়লে সহিদার তাকে ধাক্কা দিয়ে বিছানার ওপরে ফেলে রেখে আলুখেতে পানি দিতে চলে যায়। এর আধা ঘণ্টা পর বাড়িতে চিৎকার শুনে ফিরে আসে সহিদার।
পুলিশ সুপার আরও জানান, হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নিলুফা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়। এ সময় নিলুফারকে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় স্বামী সহিদার প্রভাবিত করে নিলুফারের বাবাসহ পরিবারের কাউকে অপমৃত্যুর মামলা করতে দেয়নি। সেই সঙ্গে মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে না দেওয়ার চেষ্টাও করেন।
সম্প্রতি নিলুফার মৃত্যুর ফরেনসিক প্রতিবেদন পুলিশের কাছে এলে সন্দেহভাজন স্বামী সহিদারকে শনিবার (১৩ জুলাই) রাত আড়াইটায় বদরগঞ্জ উপজেলার কচুবাড়ির হাট থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিলুফাকে শ্বাসরোধ করে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন সহিদার। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই নিলুফার বাবা আব্দুল মমিন বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান বলেন, নিলুফারের মৃত্যুর পর তার স্বামী সহিদার পাগলের মতো আচরণ করছিল, যেন স্ত্রীকে ছাড়া তার বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে নিলুফার মরদেহ যেন ময়নাতদন্ত না করা হয় সেই চেষ্টা করা হয়েছিল। পুলিশ সদস্যদের বিচক্ষণতার কারণে তারা সেই সময় মরদেহ ময়নাতদন্ত করেছিল বলেই হত্যাকারী ও হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, ইফতে খায়ের আলমসহ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ