ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ করে সফল ইসলাম
দীর্ঘদিন ধরে ফল ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত মোহাম্মদ ইসলাম। বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করেন নিজ এলাকায়। এ সময় কিশোরগঞ্জে লটকন চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। ঠাকুরগাঁওয়েও পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি চারা রোপণ করেন। সেই চারাগুলোর ফলন ভালো দেখে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ শুরু করার পরিকল্পনা করেন।
পরিত্যক্ত একটি জমিতে ইসলাম ১৫০টি লটকনের চারা রোপণ করেন। চারা রোপণের এক বছর পরই গাছগুলোতে লটকন আসতে শুরু করে। এভাবেই ঠাকুরগাঁওয়ে তার বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ শুরু।
মোহাম্মদ ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকছা ইউনিয়নের ঢোলুর হাট এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ফল ব্যবসার সাথে জড়িত। বর্তমানে তার বাগানে থোকায় থোকায় ধরে আছে লটকন। শহর থেকে প্রতিনিয়ত ফল ব্যবসায়ীরা তার বাগানে আসছেন লটকন কিনতে। অন্যদিকে তিনি নিজেও বাগান থেকে ফল নিয়ে বিক্রি করেন বিভিন্ন জায়গায়।
মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, আমি ৪০ শতক জমিতে ১৫০টি লটকন চারা রোপণ করি আজ থেকে তিন বছর আগে। এক বছর পরেই আমার লটকন গাছগুলোতে লটকন আসতে শুরু করে। সেই বছর তেমনভাবে ফলন আসেনি। পরের বছর লটকন গাছগুলোতে খুব বেশি করে ফল দেখতে পাওয়া যায়। এ বছর প্রত্যেকটা লটকন গাছে অনেক ফল এসেছে। এই গাছের ফলগুলো আমি নিজেও বিক্রি করি আবার ঠাকুরগাঁও শহর থেকে বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ী এসেও ফল কিনে নিয়ে যায়। এই বাগান থেকে প্রতিবছর কম করে হলেও দুই থেকে তিন লাখ টাকার লটকন বিক্রি করতে পারব। ঠাকুরগাঁওয়ের মাটিতেও যে লটকন চাষ করে সফল হওয়া যায় সেটি আমাকে খু অবাক করেছে। এলাকার বিভিন্ন যুবক আমার লটকন বাগান দেখতে আসে।
তিনি আরো বলেন, এই ফলটি মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে বেশ ভালোভাবেই চাষ হয়ে থাকে। আমার জানামতে ঠাকুরগাঁও জেলায় লটকনের কোনো বাগান নেই। আমি যেহেতু ফল ব্যবসায়ী আমরা লটকন সাধারণত দক্ষিণ অঞ্চল থেকে কিনে নিয়ে আসি। সেই লটকন বর্তমানে আমার বাগানে উৎপাদন হচ্ছে এতে আমি খুব খুশি। আশা করি এই গাছগুলো যদি বড় হয় তাহলে এখান থেকে আরো বেশি উৎপাদন হবে।
আরও পড়ুন
বাগান দেখতে আসা খুরশিদ বলেন, আমি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী থেকে লটকন বাগান দেখার জন্য এসেছি। সত্যি আমি অবাক হয়েছি উত্তরবঙ্গে এত সুন্দর লটকন চাষ সম্ভব। ইসলাম ভাইয়ের বাগানে এসে দেখলাম প্রতিটি গাছেই লটকন ঝুলে আছে থোকায় থোকায়। লটকন যে গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত হয় এটি আমি আগে জানতাম না। এত পরিমাণ লটকন উৎপাদন হয়েছে যা দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমার বাড়ি যেহেতু আটোয়ারীতে সেখানেও আমি একটি লটকন বাগান করার চিন্তাভাবনা করেছি। সেই জন্যই এখানে আসা।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে বাগান দেখতে আসা মিদুল বলেন, বাজার থেকে কিনে লটকন এর আগেও খেয়েছি। সরাসরি গাছ থেকে এভাবে ফল ছিড়ে খাওয়া হয়নি কখনো। এই প্রথম লটকন গাছ দেখছি। পরিবারসহ তাই ঘুরতে এসেছি। ঠাকুরগাঁও যে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষ হয়েছে এটা আমাদের উত্তর অঞ্চলের জন্য একটি অর্থনৈতিক সফলতা। আমি মনে করি এভাবে যদি কৃষক যারা রয়েছে লটকন বাগান করে তারা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে পারবে এবং এখানে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
লটকন চাষে পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও মাটি লটকন চাষের জন্য উপযোগী। এখন অনেক কৃষক লটকন চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। মার্চ মাসের দিকে লটকন গাছে ফুল আসে এবং ফল পরিপক্ব হতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগে। জুন, জুলাই ও আগস্ট মাসে লটকন বাজারে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফলটিতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণ। ভিটামিন-সি’তে ভরপুর উপকারী এ ফলটি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখার পরামর্শও দিয়ে থাকেন অনেকে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে বাণিজ্যিকভাবে এখনো লটকন চাষ হয়নি । ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকছা ইউনিয়নের ইসলাম ৪০ শতাংশ জমিতে ১৫০টি লটকন গাছ রোপণ করেন। সেই গাছগুলোতে ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণের পক্ষ থেকে সব সময় তাদেরকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। লটকন একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন গ্রীষ্মকালীন ফল। এই ফল চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। তাই এই ফলটি অত্যন্ত লাভজনক ফল।
আরিফ হাসান/আরকে