আবেদ আলীদের সম্পদের পাহাড়, অথচ কিছুই নেই খলিলের
গত কয়েকদিনে দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো বিসিএসসহ সরকারি চাকরির প্রশ্নফাঁসের ঘটনা। প্রশ্নপত্র ফাঁস করা এ চক্রের সাথে জড়িত ১৭ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের একজন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অফিস সহকারী খলিলুর রহমান।
তবে খলিলুরের বিশেষ কোনো সম্পদের তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে তার স্বজনরা প্রশ্ন তুলছেন— এর সাথে জড়িত থাকলে তার সম্পদ গেল কোথায়?
স্বজনরা এমন প্রশ্ন তুললেও খলিল অবশ্য একই অভিযোগের মুখে আগেও পড়েছিলেন। দুই বছর আগে এমন এক অভিযোগে খলিলকে শাস্তি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর চাকরি ফিরে পান তিনি।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় যে ১৭ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আবেদ আলী গ্রেপ্তার হওয়ার পর বেরিয়ে আসে তার সম্পদের পাহাড়ের তথ্য। বিত্তবৈভব রয়েছে গ্রেপ্তার হওয়া পিএসসি উপ-পরিচালক মো. আবু জাফরেরও। এলাকায় তিনি মসজিদ-মাদরাসা চালান। একই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সোহেলকে গ্রামের মানুষ বড় ব্যবসায়ী হিসেবে জানেন।
তবে যশোরের কেশবপুরের মঙ্গলকোট ইউনিয়নের পাচরাই ঘাগা গ্রামের ছেলে খলিলুরের ক্ষেত্রে দৃশ্যপট কিছুটা ভিন্ন। ৭ বছর আগে মারা যান খলিলের বাবা। পাচরাই ঘাগা গ্রামে খলিলের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে টিনের একটি কুঁড়ে ঘর। ওই ঘরে বাস করেন খলিলের চাচা নিছার গাজী (৬৫), চাচি পারুল বেগম ও তাদের ছেলে সাকিব শায়া।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আবেদ আলীদের যেমন সম্পদের পাহাড় দেখা গেছে, খলিলুরের ক্ষেত্রে তার কোনো চিহ্নও দেখা যায়নি।
খলিলুর রহমানের বাবা নিজাম গাজী পিএসসির খুলনা কার্যালয়ে চাকরি করতেন। বাবার মৃত্যুর পর পোষ্য কোটায় চাকরি পান খলিলুর। খলিলরা দুই ভাই ও এক বোন। তার বড় ভাই পিএসসির রাজশাহী কার্যালয়ে চাকরি করেন।
খলিলুর রহমানের স্বজনরা জানান, খুলনায় খলিলুর রহমানের মায়ের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি রয়েছে। সেখানেও টিনের ছাউনির আধা পাকা বাড়ি আছে। খুলনার রায়ের মহল মোল্লা পাড়া রোডের ওই বাড়িতেই ছোট থেকে বড় হয়েছেন খলিলুর। বিয়ে করেছেন, তবে সন্তান নেই খলিলুরের। পড়াশোনা করেছেন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। তারা বাবা-চাচাদের সর্বমোট জমি রয়েছে ২ বিঘা ৮৪ শতক। এই জমি এখনো ভাগ হয়নি।
গ্রামে ঘুরে খলিলুরের তেমন কোনো সম্পত্তি থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি। স্বজনরা উল্টো প্রশ্ন তুলছেন, সে আদৌ এ অপরাধের সাথে জড়িত কি না? যদি জড়িত হয়েই থাকে তবে তার টাকা-পয়সা বা সম্পদ গেল কোথায়?
খলিলের চাচা নিছার গাজী বলেন, খলিলের বাবা নিজাম গাজী (নিছার গাজীর বড় ভাই) অত্যন্ত সৎ মন-মানসিকতার মানুষ ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তবে স্বেচ্ছায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পদবি নেননি। অল্প শিক্ষিত হলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খলিলের বাবা নিজাম গাজী তার সততার জোরে পিএসসি খুলনা শাখায় চাকরি পান।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিছার গাজী বলেন, খলিল এমন দুর্নীতি করতে পারে এটা আমার বিশ্বাস হয় না। খলিলের আচার-আচরণ ভালো। সে মাঝেমধ্যে আমার বাড়িতে আসত।
খলিল যদি দুর্নীতি করে তাহলে ওর পরিবারের অবস্থা এত খারাপ হবে কেন— এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ওর চাচাদের, মানে আমাদের অবস্থাও তো ভালো না।
খলিলের চাচী পারুল বেগম বলেন, আশপাশের মানুষ টিভি দেখে আমাদের বাড়ি এসে বলছে যে খলিলকে পুলিশ ধরেছে। আমরা এর আগে কিছুই জানতাম না। এ খবর শোনার পর থেকে গলা দিয়ে ভাত নামছে না। খলিল অনেক ভালো ছেলে, ওকে আমি নিজের ছেলের মতো দেখি। আল্লাহ জানে কিভাবে কী হলো, তবে ও এমন কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারে না।
খলিলের চাচাতো ভাই সাকিব শায়ান বলেন, দুই বছর আগে এমন এক অভিযোগে খলিলের চাকরি চলে যায়। পরবর্তীতে তদন্তে খলিল নির্দোষ প্রমাণিত হয়। এরপর আবারও চাকরিতে ফিরে যায়। আমরা মনে করি প্রশাসন সঠিকভাবে তদন্ত করলে আমার ভাই নির্দোষ প্রমাণিত হবে।
খলিলের প্রতিবেশীরা বলেন, তার চালচলন বা আচরণে কোনো খারাপ বিষয় তারা লক্ষ্য করেননি।
আরও পড়ুন
খলিলের প্রতিবেশী স্থানীয় যুবলীগ কর্মী জিহাদুল ইসলাম বলেন, খলিলকে আমরা অনেকদিন ধরে চিনি। ছোটবেলা থেকে ওর সম্পর্কে জানি। খলিল পিএসসির প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িত থাকতে পারে না। আর যদি সে জড়িত থাকে তাহলে খলিলের দুর্নীতির অর্থ কোথায় গেল? খলিলের বাড়ির অবস্থা এমন কেন? আমরা সরকারের কাছে সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
মহিবুল ইসলাম নামে আরেক প্রতিবেশী বলেন, খলিল যখনই বাড়ি আসত আমাদের সাথে খুব ভালোভাবে মিশত। আমাদের মনে হয় না ও এমন কাজ করতে পারে। হয়তো ও ফেঁসে গেছে।
মঙ্গলকোট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বিশ্বাস বলেন, আমি খলিলুর রহমানকে চিনি না; তার বাড়ি এখানে তাও জানি না।
এনএফ