কুয়াকাটায় আবেদ আলীর হোটেল, যা বললেন জমির মালিক
‘কুয়াকাটায় আমাদের নতুন হোটেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম আজ। হোটেল সান মেরিনা, কুয়াকাটা। সমুদ্রকন্যার পাড়ে আজীবন নিজের জন্য একটা থাকার ব্যবস্থা ও একই সঙ্গে একটা হোটেলের মালিকানা অর্জন করতে আপনিও শেয়ার কিনতে পারেন। শেয়ার কিনতে যোগাযোগ করুন আমাদের ঠিকানায়।’
সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার প্রতিষ্ঠানটির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী নিজেকে কুয়াকাটার একটি আবাসিক হোটেলের মালিক দাবি করে চলতি বছরের ১৮ মে তার ফেসবুকে এমন একটি লেখা পোস্ট করেন। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে- আবেদ আলী নামে কাউকে তারা চেনেন না। এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের পাঞ্জুপাড়া এলাকায় ৪০ শতাংশ জমির ওপরে টিনশেড দুটি ছোট ভবনে মাত্র ছয়টি রুম দিয়ে চলছে হোটেল সান মেরিনার কার্যক্রম। তবে পুরো জমির চারপাশে দেওয়া হয়েছে সীমানা প্রাচীর। ভেতরে বহুতল কোনো ভবনের নির্মাণকাজ এখনো শুরু না হলেও সামনে বহুতল ভবনের ছবিসহ একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে লেখা আছে- শেয়ার বিক্রি করা হবে।
হোটেলের ভেতরে ঢুকতেই ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবদকের সঙ্গে কথা হয় হোটেলে দায়িতরত ম্যানেজার ফারুক হোসেনের। কোনো প্রশ্ন করার আগেই তিনি বলেন, আমি বিগত ৮ বছর ধরে এখানে চাকরি করছি। আবেদ আলী নামে আমাদের কোনো মালিক নেই। গত ৩-৪ মাস আগে তিনি একদিন আমাদের হোটেলে এসে শেয়ার কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি তাকে ঢাকা হেড অফিসে যোগাযোগ করতে বলি। ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারলাম তিনি এই হোটেলের মালিক। আমাদের হোটেল সান মেরিনার মালিকের নাম মোশাররফ হোসেন। তিনি একজন ঠিকাদার। হোটেলের শেয়ার বিক্রি করার জন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছিল, আবেদ আলী সেই সাইনবোর্ডের ছবি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দিয়ে নিজেকে মালিক হিসেবে দাবি করেছেন। কেন তিনি মালিকানা দাবি করেছেন, সেটা আমরা বুঝতে পারছি না।
এদিকে আবেদ আলীর ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্ট নিয়ে হোটেল সান মেরিনার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন, আমি আবেদ আলী নামের ওই লোককে চিনি না, তার সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি। আমি সান মেরিনা হোটেলের মালিক। ২০১০ সালে ৪০ শতাংশ জমি ক্রয় করি এবং ব্যাংক লোনের জন্য চেষ্টা করছিলাম বড় হোটেল করার জন্য।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, বেশ কয়েক মাস আগে হোটেলের শেয়ার বিক্রি করব এ জন্য একটি সাইনবোর্ড দিয়েছিলাম। আবেদ আলী সেই সাইনবোর্ডের ছবি ফেসবুকে দিয়ে মালিক দাবি কেন করেছেন সে বিষয় আমি আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আমার ম্যানেজারের মাধ্যমে জানতে পেরেছি ৩-৪ মাস আগে আবেদ আলী হোটেলের শেয়ার কেনার বিষয়ে কুয়াকাটা অফিসে যোগাযোগ করেছিলেন। শেয়ার কিনতে এসে তিনি নিজেকে মালিক বলে ফেসবুকে পরিচয় দিয়েছেন। এর বাইরে আমি আর কিছুই জানি না।
এদিকে হোটেল সান মেরিনা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝেও ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন- সান মেরিনা কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের ঝামেলায় জড়াতে চান না দেখেই আবেদ আলীর মালিকানা অস্বীকার করছেন বা গোপন রাখার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রশ্নফাঁস চক্রে গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের মধ্যে সৈয়দ আবেদ আলীর কুয়াকাটায় একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে- এমন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমিও দেখেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা পাইনি এ বিষয়ে। কোনো ধরনের নির্দেশনা পেলে আমি এ বিষয় খোঁজখবর নেব এবং নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল সোমবার (৮ জুলাই) পিএসসির দুজন উপপরিচালক, একজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী এবং তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও রয়েছেন।
এসএম আলমাস/আরএআর