রাজশাহীতে পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির ফসল
রাজশাহীর পদ্মায় পানি বাড়ছে। ফলে পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরগুলো ডুবে যাচ্ছে পানির নিচে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা ও বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর চরগুলোতে হঠাৎই পানি বৃদ্ধির ফলে চরে চাষ করা নানান ফসল তলিয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির ফসল। বাঘা উপজেলার মানিকের চরে পানিতে তলিয়ে গেছে অর্ধশত চাষির ফসল। এমন অবস্থায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা নদীতে জেগে ওঠা বাঘার মানিকের চরে শতাধিক পরিবার বসবাস করে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে এই চরের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, বাঘার অপর ১৪টি চরেরও একই অবস্থা। সেই সব চরের হাজারও মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকেই ঘর ছেড়ে এসেছেন লোকালয়ে। এই চরগুলোতে বসবাস করা বাসিন্দাদের প্রধান পেশা কৃষি। কেউ কেউ মাছও ধারেন। পানি বৃদ্ধির ফলে চারের সাথে ডুবেছে ফসলি জমিও।
পানিতে তলিয়ে যাওয়া খেতের বাদাম রক্ষার চেষ্টা করছেন চাষি বাবুল শেখ। তিনি বলেন, মানিকের চরে ৬ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। এর মধ্যে তিন বিঘার বাদাম উঠাতে পারলেও আরো তিন বিঘা বাদাম উঠানোর আগেই পদ্মায় পানিতে ডুবে গেছে। কয়েকদিন থেকে অল্প অল্প পদ্মার পানি বাড়ছিল। এর মধ্যে গত তিন দিন পদ্মা পানি তেমন বাড়েনি। অনেকটাই কমে গিয়েছিল। হঠাৎ করে দুই দিন ধরে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে ফসলি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এই অবস্থায় বাদাম তুলে নেওয়া হচ্ছে। নতুবা আর পাওয়া যাবে না।
অপর চাষি রফাতুল্লাহ বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে চোখের সামনে ডুবে যাওয়া বাদাম তুলতে পারিনি। স্থানীয় শ্রমিকরা রাসেল ভাইপার সাপের ভয়ে তেমন কাজ করতে চাচ্ছে না। এই কারণে জমির ফসল তোলা নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। তার সাড়ে চার বিঘা জমির বাদাম ও দুই বিঘা পটলের খেত পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
পদ্মার মানিকের চরের স্ত্রী দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করেন কৃষক আজগর আলী। তিনি বলেন, চরে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে দুটি ঘর করে বসবাস করছি। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাগল ও গরু নিয়ে বিপদে আছি। এখন কৃষিকাজও নেই। জাল দিয়ে মাছ ধরব সেই পরিস্থিতিও নেই।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের মেম্বার জালাল উদ্দিন বলেন, পদ্মার চরের মধ্যে মানিকেরচর দিয়ারকাদিরপুর, টিকটিকি পাড়াচর, চকরাজাপুর, কালিদাসখালির অংশ নিয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডে পরিবার তিন শতাধিক। ভোটার এক হাজার ৩৫ জন। চরের মধ্যে আমার ওয়ার্ড নিচু ও অধিকাংশ ফসলি জমি। জমিতে রোপন করা বাদাম ও পাটের ব্যাপক ক্ষতি হবে। অধিকাংশ জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিযুল আযম বলেন, পদ্মার চরে প্রায় ৩ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। চরের অধিকাংশ বাড়ির পাশে পানি এসেছে। ৪৭৩ হেক্টর জমির মধ্যে অর্ধেক বাদাম চাষিরা ওঠাতে পারেনি। পদ্মার পানিতে বাদামের খেত তলিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, এই চরে বাদামের চাষ হয়েছে ৪৭৩ হেক্টর এবং পাটের আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে। কিছু নামলা বাদাম চাষিরা জমি থেকে ঘরে তুলতে পারেনি। একই অবস্থা পটলেও। সেগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার এনামুল হক বলেন, প্রতিদিনই পদ্মার পানি বাড়ছে। গত রোববার থেকে বেশি পানি বেড়ে চলেছে।
শাহিনুল আশিক/আরকে