বাবাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত, লাশ নিয়ে মিথ্যাচার করবেন না
করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লায় খোরশেদ আলম (৭০) নামে অবসরপ্রাপ্ত এক ব্যাংকারের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর পর তার লাশের আকৃতি নিয়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
ফেসবুকে মৃত ব্যক্তির ছবি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘করোনায় কুমিল্লা মেডিকেলে একজন রোগী ছটফট করে মারা গেলেন। মৃত্যুর সময় পাশে পাননি স্বজনদের। হাত-পা এবং মাথাটাও সোজা করে দেয়নি কেউ। এমন মৃত্যু না চাইলে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।’
এমন লেখা ও ছবি কপি করে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করেছেন অনেকেই। সেই সঙ্গে যে যার মতো করে মন্তব্য করেছেন। অথচ ঘটনা ভিন্ন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খোরশেদ আলমের বাড়ি মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও গ্রামে। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর বাবার নাম মৃত আবদুল আলী। শনিবার (০১ মে) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে তার মৃত্যু হয়।
খোরশেদ আলমের ছেলে মাহমুদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবা করোনায় মারা গেছেন। তাকে ২৪ এপ্রিল কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি আমরা। ২৬ এপ্রিল আমরা জানতে পারি, তিনি করোনায় আক্রান্ত। শনিবার ভোর ৫.৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। জনতা ব্যাংকের লাকসাম শাখার সিনিয়র অফিসার ছিলেন আমার বাবা।
মাহমুদুল হাসান বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখেছি লাঠিতে ভর করে চলতেন বাবা। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি আহত হয়েছেন। সে সময়ে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা পাওয়ার পর থেকে লাঠিতে ভর করে হাঁটতেন। প্রথম জীবনে মনোহরগঞ্জ নুরুল হক হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। টাকার অভাবে প্রথম জীবনে চিকিৎসা করাতে পারেননি। ১৯৯৫ সালে স্ট্রোক করেন তিনি। এরপর আরও কয়েকবার স্ট্রোক করেছেন। এতে প্যারালাইজড হয়ে যান। বাবার ডান হাত ও ডান পা অবশ হয়ে যায়। কোমর বাঁকা হয়ে যায়।
তিনি বলেন, বাবা যখন মারা যান তখন আমি পাশে ছিলাম। আমার পরিবারের আরও দুজন সদস্য সঙ্গে ছিলেন। যারা ফেসবুকে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, অনুমান করে মিথ্যা লিখছেন, তাদের ধারণা করে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। বাবাকে হারিয়ে আমরা শোকাহত। দয়া করে মিথ্যাচার করবেন না।
খোরশেদ আলমের লাশ দাফন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন টিম বিবেক। সংগঠনের সদস্য আসিফ ইকবাল বলেন, ওই দিন সকাল ৭টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট থেকে তার লাশ বের করি। সেখানে গোসল ও কাফনের ব্যবস্থা করে আমরা জানাজা দিই। তার মরদেহ সোজা করতে চেষ্টা করেছি, স্বজনরা বলেছেন তিনি প্যারালাইজড রোগী।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাজেদা খাতুন বলেন, করোনা ওয়ার্ডে সবসময় চিকিৎসক-নার্সসহ অনেক জনবল রয়েছেন। হাসপাতালে করোনা সরঞ্জামের সংকট নেই। মনোহরগঞ্জের খোরশেদ আলম ২৪ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ১ মে তার মৃত্যু হয়। তিনি প্যারালাইজড রোগী ছিলেন। মৃত্যুর আগে এবং পরে স্বজনরা তার পাশে ছিলেন। আমাদের কাছে রোগী ও তার স্বজনদের সব ডাটা সংরক্ষিত আছে। খোরশেদ আলমের মৃত্যু এবং মরদেহ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর সুযোগ নেই। দয়া করে ফেসবুকে কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না।
এএম/জেএস