ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দেবে না পুলিশ, দাফনের অপেক্ষায় স্বজনরা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিসহ ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টানা আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান মারা গেছেন। সোমবার (২৪ জুন) সকাল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। সোমবার বিকেলে ঢাকা পোস্টকে জল্লাদ শাহজাহানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন তার বোন ফিরোজা বেগম।
তবে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোরে মৃত্যু হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের খামখেয়ালিপনায় রাত ১০টার পার হলেও মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হতে পারেননি তারা। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, শাহজাহানের মৃত্যু স্বাভাবিক হলেও ময়নাতদন্ত করতে পুলিশ তাদের হয়রানি করছে।
এদিকে, জল্লাদ শাহজাহানের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তার মৃত্যুতে এলাকাবাসীর মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় এলাকার অনেকেই তাকে তেমন চেনেন না। তবে স্থানীয় কয়েকজন ও কিছু সংখ্যক আত্মীয়-স্বজন দাফনের কাজ সম্পন্ন করতে পারিবারিক কবরস্থানে কবর খোদাইয়ের কাজ করছেন। মরদেহ এলেই গোসল করিয়ে দাফন করতে প্রস্তুত তারা।
আরও পড়ুন
প্রতিবেশী সোহাগ মিয়া নামে এক যুবক বলেন, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শাহজাহান এলাকায় তার বোনের বাড়িতে এসেছিলেন। সেসময় আমরা তাকে দেখেছি। আজ দুপুরে শুনেছি তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগছে।
ভাগনে মহসিন মিয়া বলেন, শাহজাহান আমার চাচাতো মামা হয়। এক বছর আট মাস হয়েছে উনি জেল থেকে বেরিয়েছেন। তিনি ঢাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। আজ সকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা কবর খোদাই করছি, মরদেহ নিয়ে এলে দাফন সম্পন্ন করব।
মরদেহের সঙ্গে থাকা প্রতিবেশী আলমগীরের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, শাহজাহানের মৃত্যুর খবর পেয়ে উনার বোন ফিরোজাকে নিয়ে হাসপাতালে আসি। এসে মরদেহ ভালোভাবে দেখি। যতদূর দেখেছি শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা কোনো কিছুই নেই। তবুও শেরেবাংলা নগর থানা কর্তৃপক্ষ আমাদের এক প্রকার হয়রানি করছে। তারা বলছে ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ দেওয়া যাবে না। তারা থানায় আমাদের দুই-তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখে কোনো ধরনের সমাধান দিতে পারেনি। আমাদের আবার এখন সাভার থানায় পাঠিয়েছে। আমরা মরদেহের ময়নাতদন্ত চাই না।
শাহজাহানের মৃত্যুর ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী বলছে– প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ডাক্তারকে খুঁজে পাচ্ছি না।
এ ব্যাপারে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী শেরেবাংলা নগর থানার এসআই মশিউরের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে সাভার থানায় পাঠিয়েছি। সেখানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, সাভারের হেমায়েতপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন জল্লাদ শাহজাহান। সেখানে সোমবার ভোর সাড়ে ৩টার দিকে তার বুকে ব্যথা ওঠে। পরে ভোর ৪টার দিকে বাড়ির মালিক রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল সাড়ে ৫টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তন্ময় সাহা/এসএসএইচ