ছাত্রলীগ নেত্রীকে ধর্ষণ, দেশ ছাড়লেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা
বিয়ের প্রলোভনে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী এক নেত্রীকে (২৯) একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলার পর দেশ ছেড়েছেন স্পেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাঈল হোসেন রায়হান (৩৫)। তিনি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের মোল্লাবাড়ির মো. ইউসুফ আলীর ছেলে।
গতকাল রোববার (২৩ জুন) দুপুরে মামলা দায়েরের খবর পেয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সোমবার (২৪ জুন) ভোর ৪টায় বাবাসহ লন্ডনে চলে গেছেন ওই সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। মামলায় রায়হান ছাড়াও তার বাবা মো. ইউসুফ আলী (৬৫), ভাই বাবু (৩৮) ও খালাতো বোন বেগমগঞ্জ উপজেলার সেতুভাঙ্গা এলাকার ফরাজি বাড়ির মো. সবুজ ফরাজির স্ত্রী কলিকে (৩৫) আসামি করা হয়েছে।
রোববার মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী ওই নেত্রী নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জেলা জজ আবদুর রহিমের আদালতে মামলাটি করেন। আদালত ভিকটিমের অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি রেকর্ড করে পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
আদালতে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেত্রী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসমাঈল হোসেন রায়হানের পরিচয় থেকে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শেষপর্যন্ত তা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। এরই মধ্যে বিয়ের প্রলোভন এবং বিয়ের পর ভিকটিমকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার প্রতারণামূলক কথা বলে তাকে একাধিক স্থানে নিয়ে কয়েকবার ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে রাখেন রায়হান। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ও আপত্তিকর দৃশ্য ডিলিট করে দেওয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বারবার ধর্ষণ করেন। এছাড়াও ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির বিপরীতে ভিকটিম ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করার পর আরও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন রায়হান। দাবিকৃত ওই টাকা রায়হানকে না দিলে ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রীর সব আপত্তিকর ভিডিও এবং ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে রোববার লন্ডন চলে যাবে বলে ভিকটিমকে হুমকি দেন। কোনো উপায় না পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত বৃহস্পতিবার মামলা করতে যান ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রী। কিন্তু পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে তাকে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করতে বলে। পরে রোববার দুপুরে ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রী নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে মামলাটি করেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগী নারী বৃহস্পতিবার থানায় এসেছিলেন। আমি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তিনি আর সেই অভিযোগ দেননি। তবে আদালতের আশ্রয় তিনি নিতেই পারেন। আমাদের কাছেও কেউ যদি অভিযোগ করেন তাহলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এদিকে রায়হানের বিরুদ্ধে দলীয় পদ-পদবি ব্যবহার করে পুলিশে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তাকে হয়রানি এবং তাদের ভয় দেখিয়ে নানা ধরনের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম রেঞ্জের সাবেক এক ডিআইজির ভাগনে পরিচয় দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক বদলির হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে রায়হানের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রলীগ নেত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ন্যায় বিচার চাই। আমার সাথে অন্যায় হয়েছে। রায়হান প্রতারক। আমি তার শাস্তি চাই। অনেক মেয়ে আছে ভুক্তভোগী কিন্তু তারা মুখ খোলার সাহস পায়না। আশাকরি আমি ন্যায় বিচার পেলে এটি দৃষ্টান্ত হবে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান মুন্সি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের হাতে আদালতের কোনো নির্দেশনা আসেনি। কাগজপত্র আসতে একটু সময় লাগে। কাগজপত্র হাতে পেলে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে স্পেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাঈল হোসেন রায়হান ফেসবুক মেসেঞ্জারে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদারীপুরের ছাত্রলীগ নেত্রীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার পরিচয় হয়। তবে আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গত ১৭ জুন আমি দেশে এসেছি এবং ২৪ জুন ফেরত আসার টিকিট ছিল। আমি পালিয়ে আসিনি।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এম জাকির হোসাইন এক বছরের জন্য স্পেন ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেন। স্পেনে চাকরিরত অবস্থায় ছাত্রলীগের পদ-পদবি ব্যবহার করে ইসমাঈল হোসেন রায়হান নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। নানা আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি হলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের টনক নড়ে।
দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষার্থে ২০১৯ সালের ৯ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর যৌথ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এরপরও ছাত্রলীগের ওই পদবি ব্যবহার করে রায়হান নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কাজ করে আসছিলেন।
হাসিব আল আমিন/আরএআর