ফুল সজ্জিত গাড়িতে দুই শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়
বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে একটি সুসজ্জিত গাড়ি প্রস্তুত। বিদ্যালয় ভবন থেকে গাড়ি পর্যন্ত দাঁড়িয়ে আছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণ পর দুই শিক্ষক বের হয়ে এলেন এবং উঠে বসলেন গাড়িতে। করতালি দিয়ে স্বাগত জানালো সবাই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের পৌঁছে দিলো বাড়িতে।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব চরফকিরা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মো. ইসমাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য ছিল এমন। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু সালেহ মো. আবদুল্লাহ ও মো. গোলাম মোস্তফা দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অবসরে গেছেন। তাই প্রিয় শিক্ষকদের বিদায় জানাতে শিক্ষার্থীরা এসব আয়োজন করে। এ আয়োজন দেখে দুই শিক্ষক আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।
জানা যায়, পূর্ব চরফকিরা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মো. ইসমাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র পরিষদ তাদের অবসরপ্রাপ্ত দুই শিক্ষকের জন্য বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করেন। পাপড়ি ছিটিয়ে শুরুতেই ফুলের মালা দিয়ে তাদের বরণ করে নেন। তারপর স্মৃতিচারণ মূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে বিদায়ী শিক্ষকদের ক্রেস্টসহ বিভিন্ন উপহার তুলে দেওয়া হয়। শেষে ফুল সজ্জিত গাড়িতে দুই শিক্ষকের রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
বিদায়ী শিক্ষক আবু সালেহ মো. আবদুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার সন্তানরা সবসময় আমার কাছে সন্তান হিসেবে থাকবে। আজ আমি বিদায় সংবর্ধনা নিচ্ছি, কিন্তু আমার দোয়া রেখে গেলাম। সন্তানেরা লেখাপড়া করে যখন অনেক বড় হবে, তখন আমাদের কথা মনে পড়বে। আমি চাই তারা নিজেদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
বিদায়ী অপর শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাকে যেভাবে সম্মানের বিদায় দিয়েছ এটা আমার আমৃত্যু স্মরণ থাকবে। অনেক শাসন আদর করে এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছি। নানা প্রতিকূলতা ছিল। আমি চাই সবাই ভালো থাকুক। মাঝেমধ্যেই লেখাপড়ার খোঁজ নিতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসব।
বিদায় সংবর্ধনার সভাপতি ইমাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, নদী ভাঙন কবলিত অবহেলিত এই জনপদের আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য এই দুই শিক্ষকের অবদান আমরা ভুলতে পারব না। আমরা তাদের কাছে আজীবন ঋণী। তারা আমাদের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। আজ আমরা সামান্য করেছি মাত্র। তাদের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে সুসজ্জিত গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি চর ফকিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়দল হক কচি ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষক যখন তার চাকরিজীবন শেষে বাড়ি ফিরে যান তখন তিনি অনেক কষ্ট পান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের রেখে চলে যাওয়া খুব কষ্টের। বিদায়ের কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্যই কর্তৃপক্ষ ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন করেছে। আমার ধারণা কোম্পানীগঞ্জে এই প্রথম এমন উৎসবের বিদায়। প্রতিটি শিক্ষকের বিদায় এমন হওয়া উচিত।
এসময় বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেলাল হোসেন, নাছির উদ্দিন, বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ারুল হোক মিন্টু, প্রাক্তন শিক্ষার্থী আমির হোসেন জাহিদ, নিজাম উদ্দিন ভুইঞা, শেখ ফরিদ সোহেল, মোশারফ হোসেন ইমাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
হাসিব আল আমিন/এমএ