নাটোরে জমে উঠেছে পশুর হাট, অতিরিক্ত হাসিল আদায়
পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র দুদিন। শেষ সময়ে জমে উঠতে শুরু করেছে নাটোরের কোরবানির পশুর হাটগুলো। হাটে বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতার সংখ্যাও। হাটে বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। তবে অভিযোগ উঠেছে, নিয়মের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো হাসিল আদায় করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নাটোরে কোরবানি ঈদ উপলক্ষ্যে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে হাট রয়েছে অন্তত ৩০টি। উপজেলা ও পৌরসভার মাধ্যমে এসব হাট পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারকে।
জেলায় পশুর হাটের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট বসে তেবাড়িয়া, মোখড়া, করোটা ও সিংড়ায়। তেবাড়িয়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি গরুর আমদানি বেশি। তুলনামূলক দাম স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান ক্রেতারা। তবে বাহিরের ব্যাপারী কম থাকায় হাটে গরুর দাম কম বলছেন বিক্রেতারা।
বাড়িতে পরম যত্নে একটি গরু লালন-পালন করেছেন সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার সজীব হোসেন। তেবাড়িয়া হাটে গরুটি বিক্রি করতে এসে তিনি বলেন, সকাল থেকে দুপুর হয়ে গেল সেভাবে এখনো কেউ দাম বলছে না। বাহিরের ব্যাপারীও এবার হাটে কম দেখা যাচ্ছে।
গরু কিনতে আসা সুমন আহমেদ বলেন, কয়েকজন মিলে ভাগে আমরা কোরবানি দেব। ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজারের ভেতর গরু কিনতে চাই। হাটে ছোট ও মাঝারি গরু উঠেছে বেশি। আশা করি আমাদের বাজেটের মধ্যে গরু কিনতে পারব।
এদিকে গরু কেনাবেচায় নির্ধারিত হাসিল ক্রেতার সর্বনিম্ন ৩২২ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫৫ টাকা এবং বিক্রেতার সর্বনিম্ন ৫৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা। এছাড়া ছাগলসহ অন্যান্য পশুর ক্ষেত্রে ক্রেতার সর্বনিম্ন ১০৫ টাকা, সর্বোচ্চ ২১০ টাকা আর বিক্রেতার জন্য ২১ থেকে সর্বোচ্চ ৫৩ টাকা। সরকারের বেঁধে দেওয়া হাসিল তালিকা না মেনে জেলার বেশিরভাগ হাটেই নির্ধারিত হাসিলের বেশি আদায় করছে ইজারাদাররা, এমনটাই অভিযোগ ক্রেতা-বিক্রেতাদের। হাটে বিভিন্ন জায়গায় সরকার নির্ধারিত হাসিল তালিকার ব্যানার টাঙিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও কোনো হাটে দেখা যায়নি এই হাসিল তালিকার ব্যানার।
নাটোরের সিংড়া পৌরসভার সাপ্তাহিক পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির ঈদ ঘিরে এই হাট বেশ জমজমাট। তবে গরু কিনলে ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ১ হাজার টাকা এবং বিক্রেতাকে ২০০ টাকা। আর ছাগলের ক্রেতা গুনছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। যা বিক্রেতার ক্ষেত্রে তা ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
হাটে গরু কিনতে আসা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, এমনি স্বাভাবিক সময় সাপ্তাহিক এই হাটে গরু কিনলে ৬০০-৭০০ টাকা হাসিল দিতে হতো। কিন্তু এখন দিতে হচ্ছে ১০০০ টাকা। ঈদ আসলেই তারা হাটের হাসিল বাড়িয়ে দেয়। দেখার যেন কেউ নেই।
হাটে গরু কিনতে আসা মাহবুব হোসেন বলেন, ঈদের সময় হাটে গরু কিনতে আসা সবাইকে এক প্রকার জিম্মি করে টাকা আদায় করে হাট কর্তৃপক্ষ। কেননা হাটে পশু কিনতে কিংবা বিক্রি করতে সবাইকে আসতেই হয়।
অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সিংড়া হাট কোম্পানির সদস্য আব্দুল হক বলেন, হাট পরিচালনায় বেশি খরচ গুনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি খরচ পোষাতে সহনীয় পর্যায়ে হাসিল আদায় করা হচ্ছে। আমাদের নতুন করে অবকাঠামো তৈরি করতে হয়। আগে ২০ জন লোক দিয়ে হাট পরিচালনা করতাম। আর ঈদের সময় লাগে ৫০ জন। এই ব্যয়গুলো আমার হাটের থেকে দিতে হয়।
এ বিষয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁঞা বলেন, অতিরিক্ত হাসিল কেউ নিতে পারবে না। যদি কেউ নিয়ে থাকে, তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর নাটোরে গরু, ছাগলসহ কোরবানির উপযোগী পশু রয়েছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২২৭টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার। এছাড়া ছাগল, ভেড়া, মহিষ রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ। হাটগুলোতে সুস্থ-সবল পশু বেচাকেনায় সহযোগিতার জন্য মেডিকেল টিম কাজ করছে।
গোলাম রাব্বানী/আরএআর