বগুড়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ব্যক্তির মৃত্যু
উপজেলা নির্বাচনে ভিন্ন প্রার্থীর সমর্থনের জের ধরে বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সালাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। একই ঘটনায় নিহতের আরও তিন ভাই হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বুধবার (১২ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে মারা যান তিনি।
এদিকে চার ভাইয়ের আহতের খবর সামলাতে না পেরে গতকাল মঙ্গলবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় তোফায়েল আহমেদ নামে আরেক ভাই নিজ বাড়িতে স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় শিবগঞ্জ উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের মেঘাখোর্দ্দ গ্রামে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত আরও তিন ভাই হলেন- আলম মিয়া (৫৫), শেখ সাদি (৪৫) ও আবু সালেক (৬৫)।
হামলায় নিহতের ভাতিজা বোরহান মণ্ডল শিবগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ জানায়, মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ইতোমধ্যে দুজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। তবে সালাউদ্দিন মারা যাওয়ায় এটি হত্যা মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন- দেউলী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাকিরুল ইসলাম ও মন্টু মিয়া।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গ্রামের বোরহান মণ্ডল ও শাকিরুল ইসলামের দুটি পক্ষ দুই চেয়ারম্যানপ্রার্থীর পক্ষে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। এই নিয়ে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছে। পরবর্তীতে মারপিটের ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন গ্রামের রাস্তার ওপর দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি সাকিরুল ইসলাম তার লোকজন নিয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বোরহান উদ্দিনের পক্ষের লোকজনকে বেদম মারধর করে। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত সালাউদ্দিন আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মারা যান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মেঘাখর্দ্দ মসজিদ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে দেউলী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাকিরুল ইসলাম ও স্থানীয় বাসিন্দা বোরহান উদ্দিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। সদ্য সমাপ্ত হওয়া উপজেলা নির্বাচনে এই দুই ব্যক্তি পৃথক দুই চেয়ারম্যানপ্রার্থীর সমর্থনে কাজ করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে।
তবে মামলার বাদী বোরহান মণ্ডল বলেন, মসজিদ কমিটির ঝামেলা এখানে কোনো বড় ঘটনা নয়। মূলত ২৯ মে উপজেলা নির্বাচনে সকাল থেকেই ভোট দেওয়া নিয়ে আমার সঙ্গে শাকিরুল রেষারেষি শুরু করেন। নির্বাচনে আমি তখন থেকেই আমাদের ওপর হামলার পাঁয়তারা করছিলেন। পরে সোমবার সন্ধ্যায় আমার বাবা-চাচাদের পেয়ে শাকিরুল প্রথমে হামলা চালান। পরে অন্যদের হামলার নির্দেশ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, হামলার পর আমার বাবা ও তিন চাচাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাড়িতে কেউ ছিল না। চার ভাইয়ের এমন অবস্থা সইতে না পেরে আমার চাচা তোফায়েল আহমেদ স্ট্রোক করে মারা যান। পরে আজ সকালে বড় চাচা সালাউদ্দিনও মারা যান।
মামলার বাদীর দাবি, এ ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার হলেও তার আত্মীয়-স্বজনরা আমাদের ক্রমাগত হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমরা ভয়ে বাড়িতেও যেতে পারছি না।
নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি আব্দুর রউফ বলেন, মারামারির ঘটনায় সালাউদ্দিন নামের একজন আজ সকালে মারা গেছেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মামলাটি এখন হত্যা মামলায় রূপ দেওয়া হবে। এ ঘটনায় দুজন গ্রেপ্তার আছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।
আসাফ-উদ-দৌলা নিওন/এমজেইউ