শখের বসে শুরু, এবার ঈদে বিক্রি করবেন ১৫০ গরু
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলায় বিক্রির জন্য ১৫০টি গরু প্রস্তুত করেছেন আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ নামে এক খামারি। এসব গরুর দাম সর্বনিম্ন ৮০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ লাখ টাকা। এক সময় শখের বসে গাভি পালন করলেও সেটিকে বর্তমানে ব্যবসায় রূপান্তরিত করেছেন এই খামারি।
আতাউল্লাহ সিদ্দিক মাসুদ উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের সনমানিয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি পেশায় একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হলেও ‘সিদ্দিক এগ্রো ফার্ম’ নামে তার একটি গরুর খামার রয়েছে। সেই খামারে গরু রয়েছে প্রায় ২০০টিরও বেশি।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে কিশোরগঞ্জে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯৬টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।
সরেজমিনে সিদ্দিক এগ্রো ফার্মে গিয়ে দেখা যায়, খামারে সারি সারিভাবে দাঁড়িয়ে আছে গরু। গরুগুলো মোটা ও তরতাজা। এসব গরু ঈদের বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। গরুগুলোকে দেশীয় খাবার কাঁচা ঘাস, গমের ভুসি, খৈল, চালের গুড়া খাওয়ানো হচ্ছে। হাটের ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে খামার থেকেই পশু কিনছেন অনেক ক্রেতা। এছাড়া পাইকাররাও খামার থেকে গরু কিনছেন হাটে বিক্রির জন্য।
সিদ্দিক এগ্রো ফার্মের মালিক আতাউল্লাহ সিদ্দিক বলেন, আমরা অফলাইনেও বিক্রি করছি, আবার অনলাইনেও বিক্রি করছি। আবার অনেক ক্রেতা খামারে আসছেন, পশু দেখে বুকিং দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের জায়গায় ঈদের আগের দিন আমরা গরু পৌঁছে দেব।
তিনি আরও বলেন, চার বছর আগে শখের বসে গরু পালন শুরু করি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সব খাবারের দাম চড়া। এখন ভারত আর বার্মা থেকে গরু আসলে আমাদের দেশের খামারিরা শেষ হয়ে যাবে। এখন গরুর খাবারের দামের যে অবস্থা, তাতে ক্ষুদ্র খামারিরা কোনো অবস্থাতেই টিকে থাকতে পারবে না।
সিদ্দিক এগ্রো ফার্ম দেখভালের দায়িত্বে আছেন ১৬ জন শ্রমিক। রোকন উদ্দিন নামে এক শ্রমিক জানান, মোটাতাজাকরণে তারা গরুগুলোকে সবচেয়ে বেশি সবুজ ঘাস খাইয়ে থাকেন। খৈল, নানা ধরনের ভুসি, সাইলেজ, চালের খুদ খাওয়ান। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন।
খামারের আরেক শ্রমিক রনি মিয়া বলেন, আমরা কোরবানির জন্য দেড়শ গরু প্রস্তুত করেছি। কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন সাইজের গরু রেখেছি। সর্বনিম্ন ৮০ হাজার টাকা থেকে ৮ লাখ টাকার গরু রয়েছে। আমাদের খামারের রাজাবাবু নামের গরুটি প্রায় ৮ লাখ টাকা দাম হচ্ছে। প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরুটি মোটাতাজা করেছি।
খামার থেকে গরু কিনতে এসেছেন রফিকুল ব্যাপারী। তিনি বলেন, খামার থেকে গরু কিনলে সুবিধা। কোনো ধরনের স্পট থাকে না। ছোটখাটো বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারি। এছাড়া গৃহস্থের বাড়ি থেকে কিনলে রাখা যায় না। তবে খামার থেকে কিনলে খামারে রেখে বিক্রি করা যায়। খামারে অনেক ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়।
জানা গেছে, জেলায় এ বছর ২৩ হাজার ৩৬০ জন খামারি ও কৃষক মোট ১ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯৬টি পশু প্রস্তুত করেছেন। যার আনুমানিক বাজার মূল্য দেড় হাজার কোটি টাকা। জেলায় মোট কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৩টি। উদ্বৃত্ত রয়েছে ২৭ হাজারের বেশি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে যা রাজধানী ও আশপাশের জেলায় বিক্রি হবে।
কিশোরগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুভাষ চন্দ্র পণ্ডিত বলেন, খামারিরা প্রাকৃতিক উপায়েই গবাদিপশু লালনপালন করেছেন। গত বছরের তুলনায় এবার আমাদের উৎপাদন বেশি হয়েছে। এ বছর আমাদের উদ্বৃত্ত আছে ২৭ হাজার ৭৬৩টি পশু।
মোহাম্মদ এনামুল হক হৃদয়/আরএআর