কোরবানির হাট কাঁপাবে দিনাজপুরের রাজা ও সম্রাট
আসন্ন ঈদুল আজহার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে দিনাজপুর পার্বতীপুর উপজেলার রাজা ও চিরিরবন্দর উপজেলার সম্রাট। কোরবানির জন্য বিশাল দেহের এই দুটি ষাঁড় প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশাল আকৃতির ষাঁড় দুটি দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছেন তাদের বাড়িতে।
কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের মধ্য দূর্গাপুর গ্রামে আব্দুর রাজ্জাকের সাদা-কালো রঙের সুঠাম স্বাস্থ্যের এ ষাঁড়টির দৈর্ঘ্য ১০ ফুট ও উচ্চতা ৬ ফুট। ওজন ৩৫ মণ অর্থাৎ ১৪০০ কেজি। ষাঁড়টির মালিকের প্রত্যাশা রাজাকে বিক্রি করবেন ১৮ লাখ টাকায়।
এদিকে চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের জোত সাতনালা গ্রামের ডাঙ্গাপাড়ার মো. আনিসুল হকের সাদা-কালো রঙের সুঠাম স্বাস্থ্যের সম্রাটের দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ও উচ্চতা ৬ ফুট। ওজন ৩১-৩২ মণ। ষাঁড়টির মালিকের আশা, চিরিরবন্দরের সম্রাটকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করবেন।
রাজার মালিক রাজ্জাক বলেন, রাজার খাবার রাজার মতোই দিতে হয়। প্রতিদিনে যা খরচ হয়, তা আমার সাধ্যে আর কুলাচ্ছে না। তাই এবার কোরবানিতেই রাজাকে বিক্রি করব। রাজাকে প্রতিদিন খড়, ঘাস, ছোলা, মসুরের ডাল ও ভুষি, ভুট্টার আটা, খুদের ভাত, খৈল, ধানের গুঁড়া ও চিটাগুড় ইত্যাদির পাশাপাশি কাঁচা কলা, গাজর, আপেলসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফলও খাওয়ানো হয়। রাজার থাকার জায়গায় ২৪ ঘণ্টা ৩টি ফ্যান রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকলে হাতপাখা দিয়ে রাজাকে বাতাস করতে হয়। প্রতিদিন তিন থেকে চার বার গোসল করাতে হয়। প্রয়োজন মতো খাবার ও সঠিক পরিচর্যায় দিন দিন গরুটির আকৃতি এবং ওজন বেড়ে ৪ বছরে ৩৫ মণে এসে দাঁড়িয়েছে। ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে এই ওজন মাপা হয়েছে। ইতোমধ্যে খুলনা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা এসে রাজার দাম হাকিয়েছেন। প্রত্যাশিত দাম না হওয়ায় এখনো অপেক্ষায় আছেন তিনি।
রাজ্জাকের দাবি, দিনাজপুর জেলায় তার গরুটিই সবচেয়ে বড়। তার স্বভাব শান্ত প্রকৃতির হলেও মাঝে মাঝে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তখন সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত ‘রাজাকে’ লালন-পালন করতে প্রায় ১৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান রাজ্জাক ।
সম্রাটের মালিক আনিসুল হক বলেন, জন্মের পর থেকেই সম্রাটকে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাদ্য খাইয়ে লালন-পালন শুরু করেন। খাদ্যের মধ্যে খড়, ঘাস, ছোলা, মসুরের ডাল ও ভুষি, ভুট্টার আটা, চোপড়, খুদের ভাত, খৈল, ধানের গুঁড়া ও চিটাগুড় ইত্যাদি। এতে প্রতিদিন সম্রাটের খাদ্যের তালিকায় খরচ হয় অন্তত ৮০০-৯০০ টাকা। তিনি বলেন, সম্রাটের থাকার স্থানে ২৪ ঘন্টায় ২টি ইলেকট্রিক ফ্যান দেয়া রয়েছে। সম্রাটকে প্রতিদিন ৩-৪ বার গোসল করাতে হয়। যেদিন বিদ্যুৎ থাকে না সেদিন ঘন ঘন গোসল করাতে হয়। প্রয়োজনমতো খাদ্য ও সঠিক পরিচর্যায় দিন দিন গরুটির আকৃতি বড় হতে থাকে। বর্তমান সম্রাটের ওজন ৩২ মণ। এবার কোরবানি উপলক্ষ্যে সম্রাটকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মন মতো দাম না হওয়ায় এখনো অপেক্ষায় করছি। আনিসুল হকের দাবি, এ পর্যন্ত সম্রাটকে লালন-পালন করতে অন্তত ৫-৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
রাজার চিকিৎসাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের এআই টেকনিশিয়ান মো. জাকারিয়া হোসেন। তিনি বলেন, এটি পশু সম্পদ অধিদপ্তরের ১৬৮নং প্রুভেন ব্লুর সিমেনের হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। এর মালিক রাজ্জাক আমার বন্ধু মানুষ। তার গরুর খামারের প্রতি আগ্রহ থাকায় গরুগুলোর জন্য বিভিন্ন সময় চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। রাজাকে খাদ্য প্রদান ও লালন-পালন করে এতো বড় করা হয়েছে।
এদিকে সম্রাটের চিকিৎসাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেন চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মো. রায়হান। তিনি বলেন, এটি পশুসম্পদ অধিদপ্তরের ৭২৬ নম্বর প্রুভেন বুল সিমেনের হলেস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। ষাঁড়ের মালিক আনিসুল হক বিভিন্ন সময় চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ নিয়ে থাকেন।
ইমরান আলী সোহাগ/আরকে