ফোন করলেই রোগীর বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে ফ্রি অক্সিজেন সিলিন্ডার
শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ঝামুদপুর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। অসুস্থতার কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছিলেন না। তার অক্সিজেনের প্রয়োজন। তিনি ‘জয়পুরিয়ান ট্রাস্ট ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিসে’ ফোন করেন। ফোন রিসিভকারী সময়ক্ষেপণ না করে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেন ওই বৃদ্ধের বাসায়। অক্সিজেন সাপোর্ট পেয়ে বর্তমানে কিছুটা সুস্থ আছেন তিনি।
এভাবেই শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য জয়পুরহাটের বিভিন্ন প্রান্তে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছে ‘জয়পুরিয়ান ট্রাস্ট ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ফোন করে ঠিকানা জানালেই স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুত অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন। জেলার ৫টি উপজেলার ৫ পৌরসভা ও ৩২টি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে এ অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ৫ উপজেলায় ২৪ ঘণ্টা সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে কাজ করছেন ৬০ জন শিক্ষার্থী।
প্রাথমিকভাবে ১০টি সিলিন্ডার দিয়ে গত বছরের ৮ আগস্ট থেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহের এই সেবা চালু করে সংগঠনটি। এখন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২টি। এখন পর্যন্ত জেলায় এই সেবা পেয়েছেন শতাধিকেরও বেশি অসহায় রোগী।
সেবা পাওয়া ৬৫ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধ বলেন, আমার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টের সমস্যা হচ্ছিল। তাদের কল দেওয়ার পরপরই অক্সিজেন নিয়ে আমার বাড়িতে উপস্থিত হন। অক্সিজেন নেওয়ার পর বর্তমানে আমি সুস্থ আছি। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের জন্য দোয়া রইল।
জয়পুরিয়ান ট্রাস্ট্র ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিসের চিফ কো-অর্ডিনেটর তানভীর রহমান ও জয়েন্ট চিফ কো-অর্ডিনেটর আশিক অমি ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় শ্বাসকষ্টের রোগী ও করোনায় আক্রান্ত বেশ কয়েকজন যারা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তাদের গভীর রাতে হঠাৎ অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যায়। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা তাৎক্ষণিক অক্সিজেন দেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু রাতে অক্সিজেন কোথায় পাবে বা সেই গ্রাম থেকে হাসপাতালে আসা অনেক কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। সেই সঙ্গে করোনাকালে হাসপাতালগুলোতেও খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্য নেই। পরিবারের সদস্যরা আমাদেরকে ফোন দিলে আমরা তখনই তাদের নিকটস্থ স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপের মাধ্যমে দ্রুত অক্সিজেন সেবা পৌঁছে দেই। পরে তারা কয়েকবার রিফিলও করেন। এভাবেই এখনো নিয়মিত ফ্রি অক্সিজেন সেবা চলছে।
জয়পুরিয়ান ট্রাস্টের জয়েন্ট চিফ কো-অর্ডিনেটর এবিএম ইমরুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২৪ ঘণ্টা মানুষের প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস নিশ্চিতের জন্য আমাদের এই সংগঠন। জয়পুরহাটের ৫ উপজেলায় আমাদের সক্রিয় ৬০ জন সদস্যদের নিয়ে আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা ২৪ ঘণ্টা শ্বাসকষ্ট ও করোনা রোগীদের অক্সিজেন সেবায় নিয়োজিত আছেন। খবর পেলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগীর বাড়িতে পৌঁছে যান তারা।
জয়পুরিয়ান ট্রাস্টের চিফ কো-অর্ডিনেটর মো. মাসুদুর রহমান রানা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, জয়পুরহাটের যেসব ছেলে-মেয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। সেসব মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমাদের এই সংগঠন। করোনার শুরুতে জয়পুরহাট জেলার যারা কর্মহীন হয়েছিলেন তাদের এ ট্রাস্টের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া মাস্কও বিতরণ করা হয়।
পরবর্তীতে জয়পুরহাটে করোনা আক্রান্তদের অক্সিজেনের একটি বড় অভাব লক্ষ্য করা যায়। তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিক অমি ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর রহমান এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলে আমারা পে ইট ফরোয়ার্ড বাংলাদেশ ও মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাৎক্ষণিক তারা আমাদের সহায়তা করে। পরবর্তীতে আমরা আরও অক্সিজেন ব্যাংক ক্রয় করি এবং ‘জয়পুরিয়ান ট্রাস্ট ফ্রি অক্সিজেন সার্ভিস’ নামক সংগঠনের মাধ্যমে এ সেবা দেওয়া শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত চলমান আছে।
আরএআর