রাজকীয় বিদায় পেলেন সাব ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম
দীর্ঘ ৪০ বছর ৩ মাস চাকরিজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে সুসজ্জিত গাড়িতে চেপে অবসরে গেলেন নোয়াখালীর পুলিশ সদস্য সাব ইন্সপেক্টর মো. জহিরুল ইসলাম (৫৯)। অবসরে যাওয়ার দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে তাকে। মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের আয়োজনে আনন্দঘন পরিবেশে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়।
সাব ইন্সপেক্টর মো. জহিরুল ইসলাম সদর উপজেলার নোয়াখালী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কালিতারা গ্রামের মহসিল আলী মাঝি বাড়ির মৃত সৈয়দ আহমেদের ছেলে। তার স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে।
তিনি ১৯৮৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ৩ মাস দেশের বিভিন্ন থানায় দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার চাকরিজীবনের শেষ মুহূর্তকে স্মরণীয় করতে বিশেষ আয়োজন করেছিল শেষ কর্মস্থল কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের সহকর্মীরা।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মোর্তাহীন বিল্লাহ, কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুস সুলতানসহ থানার অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার (৪ জুন) বিকেলে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসময় তার হাতে উপহার তুলে দেন কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী ও সহকর্মীরা। এরপর সকল পুলিশ সদস্য সারিবদ্ধ হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে সাব ইন্সপেক্টর মো. জহিরুল ইসলামকে বিদায় জানান। এরপর সুসজ্জিত থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গাড়িতে করে তাকে সদর উপজেলার নোয়াখালী পৌরসভার নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়।
জহিরুল ইসলামের শ্যালক শরীফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার দুলাভাইকে অত্যন্ত সুন্দর ও সুসজ্জিত ওসির গাড়িতে বিদায় জানানো হয়েছে। এতো সুন্দর আয়োজন আগে কখনো দেখিনি। তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর মানুষের সেবা করেছেন। কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ যে আয়োজন করেছে তা দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত।
সাব ইন্সপেক্টর মো. জহিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাকরি জীবন শেষে এমন সম্মান অনেকের ভাগ্যে জোটে না। এতো বছর কাজ করেছি, এমন বিদায়ে আমি সত্যিই আনন্দিত। আমার অবসরে যাওয়ার সময় এমন সম্মান প্রদর্শন করার জন্য নোয়াখালী জেলা পুলিশ ও কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সকল পুলিশকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন উদ্যোগ আমাকে কর্মজীবনের শেষে এক সুখস্মৃতি দিয়েছে। আমরা চাই পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে এভাবেই বিদায় জানানো হোক।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আব্দুস সুলতান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে কোম্পানীগঞ্জ থানা থেকে তিনজন পুলিশ সদস্য বিদায় নিয়েছেন। বিদায়ীদের স্মরণে সহকর্মীরা স্মৃতিচারণ করেন এবং উপহার তুলে দেন। সাব ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম অবসরজনিত বিদায় নিয়েছেন। এছাড়াও থানায় দীর্ঘদিন কাজ করা সাব ইন্সপেক্টর পুস্প বরণ চাকমা অবসরে যাওয়ার জন্য নিজ জেলায় বদলি নিয়েছেন। এছাড়াও সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মোজাফফর আলী বদলি জনিত বিদায় নিয়েছেন। বিদায়ী মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ এই আয়োজন করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত।
কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাব ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম ৭ মাস আমাদের থানায় ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় মানুষের জন্য ভালো কাজ করেছেন এবং তিনি সুস্থ এবং ভালো আছেন। ৪০ বছর সেবা দিতে পারা অনেক ভাগ্যের বিষয়। তাই আমার গাড়িতে করে বাড়িতে পাঠিয়েছি। একজন সহকর্মীকে এমন বিদায় জানাতে পেরে আমি আনন্দিত। কর্মজীবনের শেষ বেলাকে রাঙ্গিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। এই স্মৃতিটুকু বাকি জীবন চলার পথে আনন্দধারা হয়ে কাজ করবে। পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ী একটু ভিন্ন ধাচের আয়োজন করতে পেরেছি, এটাই ভালোলাগা। আগামীতেও সবার বিদায় বেলায় সুখস্মৃতি হয়ে থাকার মতো এমন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মোর্তাহীন বিল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাকরির শেষ সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবাইকে অবসরে যেতে হবে। দেশের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার শেষ দিনে এমন আয়োজন অসাধারণ উদ্যোগ। পুরো আয়োজনে আমি ছিলাম। সাব ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম দীর্ঘ ৪০ বছর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে অবসরে গেছেন, এটা বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব। তিনি এ বাহিনীতে থেকে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন,নিশ্চয় বাকি জীবনেও তিনি সমাজের জন্য কাজ করে যাবেন।
হাসিব আল আমিন/এমএএস