সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করে বিপাকে দিনমজুর বাবা
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন এক দিনমজুর রিকশাচালক বাবা। একদিকে মামলা তুলে নিতে আসামি পক্ষের হুমকি-ধমকি। অন্যদিকে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি।
সবমিলিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের গোসাই গোবিন্দপুর গ্রামের দিনমজুর রিকশাচালক নাসির শেখ।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই রাতে পাঁচ বছর বয়সী নাতি ইয়ামিনকে কোলের মধ্যে নিয়ে ঘরের বারান্দায় ঘুমিয়েছিলেন উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের গোসাই গোবিন্দপুর গ্রামের মহিদ শেখ ও তার স্ত্রী নাছিমা বেগম। গভীর রাতে ঘুমন্ত ইয়ামিনকে তুলে নিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার পর লাশ বাড়ির অদূরে একটি পাটক্ষেতে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১৯ জুলাই ইয়ামিনের বাবা নাছির শেখ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা তদন্তে নেমে শিশু ইয়ামিন হত্যার সঙ্গে প্রতিবেশী রেজাউল শেখ ওরফে নিজাম শেখের (৪৫) সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। নিজামকে গ্রেপ্তার করে ২৮ জুলাই আদালতে পাঠায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বালিয়াকান্দি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিবুল ইসলাম। আদালতে পাঠানোর আর্জিতে উল্লেখ করা হয়, নিজাম শেখ তার অন্যান্য সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে শিশু ইয়ামিনকে হত্যা করেছে। পরবর্তীতে নিজাম জামিন নিয়ে করাগার থেকে বের হয়ে যায়।
নিহত শিশু ইয়ামিনের স্বজনদের অভিযোগ, প্রভাবশালী নিজাম জামিনে বের হয়ে মামলা তুলে নিতে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে তার ভাই হাশেম শেখকে দিয়ে আদালতে চাঁদাবাজি ও মারামারির একাধিক মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়ে তাদের হয়রানি করছে।
ইয়ামিনের বাবা নাছির শেখ বলেন, নিজাম ও তার পরিবারের সঙ্গে আমার জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ নিজামকে গ্রেপ্তারের পর সে তার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে।এরপর পুলিশ নিজামের পরিবারের কয়েকজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। তবে পরবর্তী সময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে নিজামের পরিবারের লোকজন আমার ক্ষেতের ফুলকপি কেটে পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি করে। নিজাম হাইকোর্ট থেকে জামিনে বের হয়ে আমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দিয়ে চলেছে। তার ভাই হাশেম শেখকে দিয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মারামারির দু'টি মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে। বর্তমানে মামলাদি ফরিদপুরের পিবিআই তদন্ত করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি আমার সন্তান হত্যার সঠিক বিচার চাই।
ইয়ামিনের মা বিথী আক্তার বলেন, আমার আরও দুটি শিশু সন্তান আছে। আমি সবসময় আতঙ্কে থাকি। কখন ওরা আবার আমার এই দুই সন্তানকেও তুলে নিয়ে মেরে না ফেলে।
ইয়ামিনের দাদি নাছিমা বেগম বলেন, আমার কোল থেকে তুলে নিয়ে আমার কলিজার টুকরা নাতিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিজামসহ যারা আমার নাতিকে হত্যা করেছে আমি তাদের সবার ফাঁসি চাই।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ফরিদপুর কার্যালয়ের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি তদন্তের কাজ চলমান আছে। তদন্তাধীন মামলার বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরকে