সুপেয় পানির তীব্র সংকটে চার উপকূলীয় উপজেলার মানুষ
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রায় ৩০ ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডবে স্থলভাগে যে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে তাতে বাগেরহাটের বেশিরভাগ এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। লবণ পানি প্রবেশ করেছে সুপেয় পানির আধার সরকারি-বেসরকারি পুকুরে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন এলাকার পিএসএফ ও টিউবওয়েল। যার ফলে জেলার মোংলা, রামপাল, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
নদী তীরবর্তী এলাকার অনেকে বাধ্য হয়ে লবণ পানি পান করছেন। লবণ পানি পান ও ব্যবহার করায় অনেকের চর্মরোগ ও পেটের পীড়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ জীবন বাচাঁতে দূরদূরান্ত থেকে পানি ক্রয় করে আনছেন। ঝড়ের তাণ্ডব শেষ হওয়ার পরে জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার পাওয়া গেলেও, সুপেয় পানির কোনো সরবরাহ ছিল না দুর্গত এলাকায়। সরকারিভাবে নদী তীরবর্তী এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া এলাকা ঘষিয়াখালী গ্রামের জাহিদুল ইসলাম খলিফা বলেন, ঝড়ে এত বেশি পানি হয়েছিল পুরো এলাকা তলিয়ে গেছে। এখনো বেশিরভাগ জায়গায় পানি জমে আছে। বাজারে যে পুকুরের পানি সবাই পান করত, সেই পুকুরের পানি এখন লবণাক্ত। বাধ্য হয়ে অনেকেই লবণ পানি পান করছেন।
একই এলাকার জাহানুর বেগম নামের এক নারী বলেন, চারদিকে পানি কিন্তু খাবার ও গোসলের পানি নেই। বাধ্য হয়ে লবণ পানি খাচ্ছি। প্রথম দুই দিন কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু জীবনতো বাঁচাতে হবে।
এই উপজেলার পঞ্চকরণ, তেলিগাতি, বারুইখালী, হোগলাবুনিয়া, জিউধরা, বলইবুনিয়া, চিংড়াখালী, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সর্বত্রই এখন সুপেয় পানির সংকট।
উপজেলার রামপালের হোটেল ব্যবসায়ী লিমা বেগম বলন, গতকাল থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় হোটেলে পানির ব্যবস্থা করতে পারেননি। এ কারণে গতকাল হোটেলে রান্নাবান্না হয়নি। আজ বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি সংগ্রহ করে রান্না করেছি অনেক কষ্ট করে।
এদিকে শরণখোলা উপজেলা সদরের বাইরে সব জায়গায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সাউথখালী ইউনিয়নের খুড়িয়াখালী গ্রামের নাইম শেখ বলেন, ঝড়ে গাছ পড়ছে, ঘর ভেঙেছে, রাস্তা ও বাড়ি-ঘরে পানি উঠছে। সেসব এখন স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু যে পুকুরের পানি যে লবণ হয়ে গেছে, তা মিষ্টি হবে কী দিয়ে। পানির যে কী কষ্ট তা বলে বুঝানো যাবে না।
একই গ্রামের ফারিয়া আক্তার বলেন, ঝড় চলে গেছে, কিন্তু আমাদের সব জায়গায় লবণ পানি দিয়ে গেছে। মূলত বৃষ্টির পানি খাচ্ছি আমরা। কিন্তু গোসল রান্না এসব কাজের জন্য বাধ্য হয়ে লবণ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। অনেকের চর্মরোগ দেখা দিয়েছে।
মোংলা ও রামপাল উপজেলার মানুষও সুপেয় পানির একই ধরণের সংকটে ভুগছেন।
এদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিক বলেন, দুর্গত মানুষদের জন্য ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। মোরেলগঞ্জ, শরণেখোলা ও মোংলা উপজেলায় ৩টি ভ্রাম্যমান ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২ হাজার লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এটি চলবে।
তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালে দুর্গত স্থানীয়দের দাবি সুপেয় পানির সংকট মেটানোর জন্য ভ্রাম্যমাম ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা দরকার।
শেখ আবু তালেব/আরকে