দেবীগঞ্জে গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য ৮ গ্রাম, দুশ্চিন্তায় পরিবার
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে দেরি হওয়ায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৫০০-৬০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে উপজেলাটির প্রায় ৮টি গ্রাম। এতে করে ওইসব বাড়ির পরিবারগুলোর মধ্যে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। আতঙ্কে দিন পার করছেন তারা।
জানা যায়, গত ২১ মে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের ফলাফলকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী সহিংসতা ঘটনায় মামলার আসামি হয়েছেন এ এলাকার অনেকেই। মামলার গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষরা ঘরছাড়া হওয়ায় মৌসুমের বোরো ধান কাটতে পারছে না বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
এলাকাবাসী বলছেন, শালডাঙ্গা ইউনিয়নের দামানীগ্রামের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে কৃষি। এ সময়টাতে বোরো ধান কাটার সময়। কিন্তু নির্বাচনে সহিংসতায় মামলার কারণে গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন পুরুষরা। দামানীগ্রামের মতো অবস্থা বানুর হাট, ধূলাঝাড়ি ও ছত্রশিকারপুরসহ ইউনিয়নটির চারটি ওয়ার্ডের ৮টি গ্রাম। এই গ্রামগুলো পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় সময়মতো ধান কাটতে না পারলে নষ্ট হতে পারে জমির বোরো ধান।
মামলার গ্রেপ্তার আতঙ্কে দুই ছেলের ঘরছাড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফাতেমা খাতুন বলেন, ভোটের দিন মারামারির ঘটনায় হওয়া মামলার ভয়ে আমার দুই ছেলে বাড়ি থাকতে পারছে না। আমরা গরিব মানুষ। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না। ছেলে দুইটা কোথায় কীভাবে থাকছে জানি না। মা হয়ে ছেলেদের এ কষ্ট সইতে পারছি না। ভয়ে দিন কাটছে।
একই কথা সুমিত্রা রানি নামের আরেক নারীর। তিনি বলেন, ভোটের দিন হামলা-গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে তা ওইখানের এলাকার লোকের সঙ্গে, বাইরের লোকেরাও ছিল। আমাদের গ্রামের লোকজন এই কাজ করেনি। কিন্তু আমাদের ওপর দোষ আসছে। একটা যদি গাড়ি যায়, বাচ্চারাও ভয়ে শিউরে উঠে পালিয়ে যায়। ঘরে পুরুষ মানুষ না থাকলে যে কী কষ্ট! ঘটনার সমাধান চাই। এভাবে কয়দিন পালিয়ে বেড়াবে তারা। এভাবে চলতে থাকলে অনাহারে কাটাতে হবে।
স্থানীয়দের মধ্যে আমিনুর ও তুহিন বলেন, ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণা দিতে দেরি হওয়ায় লোকজনের চিৎকার শুনতে পাই। পরে দেখি কেন্দ্রে ঢিল ছোড়াছুড়ি চলছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর থেকেই আমাদের এলাকার লোকজন গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
তবে পুলিশ বলছে, নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করা হবে না। জমির ধান কাটতে পুলিশ কোনো বাধা দেবে না। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা এই হামলায় সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় কয়েকজনকে নামীয় এবং অজ্ঞাত ৫০০-৬০০ জনকে মামলার আসামি করার কারণে গ্রাম ছাড়া হয়ে পড়েছে ৮ গ্রামের প্রায় হাজার হাজার পুরুষ। দিনের বেলায় কয়েকজনের দেখা মিললেও কোনো গাড়ি এলেই গা ঢাকা দিচ্ছেন তারা।
শালডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনের দিন কতিপয় কিছু লোকের জন্য সহিংসতার ঘটনার কারণে মামলার গ্রেপ্তার আতঙ্কে আমার ইউনিয়নের সাধারণ মানুষদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় বোরো ধান কাটতে পারছে না পরিবারগুলো। সময়মতো ধান কাটতে না পারলে মাটিতে পড়ে যেতে পারে ধান। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি এ ঘটনায় যেন কোনো গরিব-নিরীহ মানুষদের হয়রানি না করা হয়। যারা প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করা হোক।
দেবীগঞ্জ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরকার ইফতেখারুল মোকাদ্দেম বলেন, ২১ মে দামানীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের ফলাফলকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় ভোটকেন্দ্রটির প্রিসাইডিং অফিসার গোলাম আজম বাদী হয়ে দেবীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত ৫০০-৬০০ জনের নামে মামলার এজাহার দায়ের করলে আমরা এখন পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। যারাই এই হামলায় সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় আমরা ফুটেজ ও ছবি দেখে আসামিদের শনাক্ত করছি। তাই কোনো নিরীহ লোককে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না। তবে যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না তাদের ভয়ের কিছু নেই।
এসকে দোয়েল/এমজেইউ