নীলফামারীতে ঝড়ে উড়ে গেছে পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়ি
আকস্মিক ঝড়ে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার চারটি ইউনিয়নের প্রায় পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ সময় বাড়ি-ঘর ও রাস্তার ওপর ছোটবড় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। গাছপালা ও ঘর চাপা পড়ে আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। ঝড়ে চারটি ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০মে) বেলা ১১টার দিকে ডিমলা উপজেলার খালিশাচাপানী, নাউতারা, ঝুনাগাছচাপানী এবং গয়বাড়ি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে আকস্মিক ওই ঝড় বয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, বেলা ১১টার দিকে প্রচণ্ড গতিবেগে খালিশাচাপানী, নাউতারা, ঝুনাগাছচাপানী এবং গয়াবাড়ী ইউনিয়নে হঠাৎ প্রচন্ড গতিতে ঝড় শুরু হয়। মাত্র চার থেকে পাঁচ মিনিট স্থায়ী ওই ঝড়ে খালিশাচাপানী ইউপির বাইশপুকুর, ছোটখাতা,ডালিয়া গ্রাম, নাউতারা ইউপির আকাশকুড়ি, নিজপাড়া, কাকড়া, সাতজান ও শালহাটি গ্রাম, ঝুনাগাছজচাপানী ইউপির ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি ও উত্তর সোনাখুলি গ্রাম এবং গয়াবাড়ি ইউপির দক্ষিণ গয়াবাড়ি মৌজার ভেন্টিয়াপাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, নয়া জামায়াত পাড়া এলাকার পাঁচ শতাধিক কাঁচা-আঁধাপাকা ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ সময় অধিকাংশ ঘরের চাল ও বেড়া উড়ে গেছে। এসময় উপড়ে পড়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গাছপালা। ঘর ও গাছের চাপায় অন্তত ১৫ জন মানুষ আহত হয়েছেন।
নাউতারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আশিক ইমতিয়াজ মোর্শেদ মনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার থেকে পাঁচ মিনিট স্থায়ী ওই ঝড়ে ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবারে তিন শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অধিকাংশ ঘর-বাড়ির চাল ও বেড়া উড়ে গেছে। ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাটে ছোটবড় অসংখ্য গাছাপালা উপড়ে পড়েছে। ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় দেড় শতাধিক পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অস্থায়ী বসবাসের জন্য তাবু ও পলিথিন প্রদান করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করে উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো হবে সরকারি সহায়তার জন্য।
খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝড়ে আমার ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও ছোটখাতা, ডালিয়া গ্রামে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই তিন গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের আড়াই শতাধিক কাঁচা ও আঁধাপাকা ঘর ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে।
অনেকের ঘরের চাল ও বেড়া উড়ে গেছে। গাছপালা উপড়ে পড়েছে মানুষের বাড়ি-ঘরে। ঝড়ে গাছ ও ঘর চাপা পড়ে বেশ কজন আহত হয়েছে। এছাড়াও একটি ছাগল ও একটি গরু মারা গেছে। ঘর-বাড়ির উপরে উপড়ে পড়া গাছপালা সরাতে কাজ করছে ডিমলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা।
গয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইবনে ফয়সাল চৌধুরী মুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝড়ে আমার ইউনিয়নের দক্ষিণ গয়াবাড়ি গ্রামের ভেন্টিয়াপাড়া, চেয়ারম্যান পাড়া, নয়া জামায়াত পাড়ার শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে।
ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো. একরামুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝড়ে আমার ইউনিয়নের ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি, উত্তর সোনাখুলিসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে দুই শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ডিমলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ইনচার্জ মো. মোজাম্মেল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেলা সাড়ে ১২টার জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা বাইশপুকুর, ছোটখাতা, ডালিয়া গ্রামে ছুটে আসি। তিন গ্রামেই অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়ে রাস্তাঘাট ও মানুষের বসতবাড়ির ওপর পড়ে রয়েছে। ভেঙে পড়া গাছপালা অপসারণ করা হচ্ছে। দ্রুত এসব কাজ সম্পন্ন হবে।
এ বিষয়ে নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র মহা-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওইসব এলাকায় ঝড়ে বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনের আটটি খুঁটি উপড়ে পড়ে এবং ৭টি ট্রান্সমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনশত স্পটে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের তার ছিঁড়ে গেছে। এসব মেরামতের কাজ চলমান আছে। অধিকাংশ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মেজবাহুর রহমান বলেন, ঝড়ে যেসব এলাকায় মানুষের বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেইসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, উপজেলার খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, নাউতরা ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা সংগ্রহ করছেন। সন্ধ্যার মধ্যে তালিকা চেয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হাতে পেলে রাতেই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে পাঠানো হবে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে সৈয়দপুর পৌর শহরের আমিন মোড় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়। ওই ঝড়ে ১২টি দোকান ঘরের চাল ও বেড়া উড়ে গেছে। এসময় পুরনো কয়েকটি গাছ উপড়ে আটটি বসত ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভা ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল মো. জোবায়দুর রহমান শাহিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়ন করে তাদের সরকারি সহযোগিতা প্রদানের জন্য পৌর প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে।
শরিফুল ইসলাম/এমএএস