আতঙ্ক কাটেনি সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষের
নদীতে ভাটার সময় ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানায় বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলেও আতঙ্ক কাটেনি সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদে। সেখানকার মানুষের ভয়, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানিতে উপকূলীয় এ অঞ্চলটির জনপদ প্লাবিত হতে পারে।
সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ উপচে এবং প্রবল বর্ষণে মৎস্যঘের প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে জেলে পল্লী।
বিধ্বস্ত হয়েছে ১হাজার ৪৬৮ বাড়িঘর। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২লাখ ২১ হাজার ১৭৬ মানুষ। এ ছাড়া ফসলের মাঠ, ঘের-পুকুর লোনা পানিতে ভেসে গেছে।
সোমবার (২৭ মে) রাতে ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ১ হাজার ৪৬৮টি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ৪৩টি ইউনিয়নের মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্যামনগর, আশাশুনি ও কালিগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে সাতক্ষীরা শহরেও অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২লাখ ২১ হাজার ১৭৬ মানুষ।
গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে শওকাত মোড়ল নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত এক দশকে মে মাসে এখানে আটটি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ৪ মে ঘূর্ণিঝড় ফণী, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান, ২০২১ সালের ২৬ মে ইয়াস— এ ছাড়া ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা, ২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, ২০১৭ সালের ৩০ মে ঘূর্ণিঝড় মোরা ও ২০১৩ সালের ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আঘাত হানে। তবে এই দশকে সুন্দরবন সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিডরে।
উপকূলে অবস্থান করা আহসানু রহমান রাজিব নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালে সাতক্ষীরা উপকূল এলাকায় খুব বেশি ক্ষতি না হলেও নদ-নদীগুলো এখনও উত্তাল। এর আগেও দেখা গেছে, সাতক্ষীরা উপকূল ঝড়ের চেয়ে লবণাক্ত পানির কারণে বেশি ক্ষতি হয়। উপকূলের মাটির বাঁধগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এখনও গতকালের মতো বৃষ্টি এতে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এ জন্য আতঙ্ক কাটেনি সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষের।’
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রেমাল সাতক্ষীরা উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। আমার ইউনিয়নের দেড় শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ না ভাঙলেও কোথাও কোথাও বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বৃষ্টিতে বাঁধগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজও বৃষ্টি হচ্ছে কী হবে আল্লাহ ভালো জানেন।’
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দীন জানান, বেড়িবাঁধের দুর্বল পয়েন্টে দিনরাত কাজ করা হয়েছে। এ কারণে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজিবুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে, শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়াসহ বারোটি ইউনিয়নে ৫৪১টি কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
এর মধ্যে ৯৩টি সম্পূর্ণ এবং ৪৪৮টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল জোয়ারে নদীর পানি ছাপিয়ে কোথাও কোথাও লোকালয়ে প্রবেশ করলেও বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া যায়নি। তবে গতকালের টানা বর্ষণে কিছু মাছের ঘের তলিয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব টানা দুই দিন ধরে চলছে। বিভিন্ন উপজেলায় মানুষের জানমালসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সকল ক্ষতির তালিকা নিরূপণ করে সহযোগিতা করা হবে।
মোহাম্মদ মিলন/এমটিআই