‘এমপির প্রভাবে’ ভোটের দুই দিন আগে সরে দাঁড়ালেন ওহিদুজ্জামান
ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ওহিদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন থেকে আমার সরে দাঁড়ানোর অন্যতম কারণ ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনের এমপি শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবুর প্রভাব। দ্বিতীয় কারণ হলো সংঘাত এড়ানো। আমি এমপির সঙ্গে বিরোধে জড়াতে চাই না।
সালথা উপজেলা নির্বাচন আগামী মঙ্গলবার (২১ মে)। ওইাদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচনের দুই দিন আগে রোববার (১৯ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের মরহুম সাংবাদিক শামসুদ্দীন মোল্লা মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে ওহিদুজ্জামান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
সালথা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন প্রার্থী ছিলেন। এদের একজন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ওহিদুজ্জামান ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর। ওহিদুজ্জামান সরে যাওয়ায় এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বর্তমানে একজন প্রার্থী থাকলেন। তবে সরকারিভাবে সরে যাওয়ার সময় আগেই অতিবাহিত হওয়ায় আগামী মঙ্গলবার ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণের পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদেও ভোটগ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর যুক্তি হিসেবে ওহিদুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে নির্দেশনা ছিল কোনো এমপি, মন্ত্রী নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। আমার মাধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা ছিল নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে, লেভেল প্লেইং ফিল্ড থাকবে। কিন্তু দেখা গেল আমার মামলার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ওয়াদুদ মাতুব্বরের পক্ষে সরাসরি সকল কলকাঠি নেড়েছেন এ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু। তিনি (সংসদ সদস্য) ওয়াদুদ মাতুব্বরের মুখপাত্র হিসেবে ও প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে সব জায়গায় হস্তক্ষেপ করছেন। নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে ‘কনভিন্স’ করছেন। বিভিন্ন আইনজীবী ও হাইকোর্টে গিয়ে তিনি ওয়াদুদ মাতুব্বরের পক্ষে মামলার তদবির পর্যন্ত করছেন।
ওহিদুজ্জামান বলেন, এ মামলা থেকে শুরু করে ওয়াদুদ মাতুব্বরের সকল কার্যক্রম উনি (সংসদ সদস্য) নিজেই পরিচালনা করছেন। সেটা হয়তো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ঘরের ভেতর বসে করতেছেন। ক্যামেরার সামনে আসতেছেন না।
এ নির্বাচনে সকল তৃনমূল নেতার সাথে এমপির যোগাযোগ এবং তার বাড়িতে এসেও অনেক মিটিং হয়েছে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এবং তার মামলা মোকাদ্দমার প্রধান তদবিরকারী সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু। এসব কিছু ভেবে পাশাপাশি সহিংসতা এড়াতে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি। আমি এমপির সাথে সরাসরি সংঘাতে যেতে চাই না।
সালথাকে একটি দাঙ্গাপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমার নিজের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে। পাশাপাশি হুমকির মুখে রয়েছে আমার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিরাপত্তা। তাই আমি সংঘাতের পথে যেতে চাইনি। এ কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।
ওয়াদুদ মাতুব্বরের সাথে এ নির্বাচনে তার দীর্ঘ আইনি লড়াই নিয়ে ওহিদুজ্জামান বলেন, গত ২১ এপ্রিল ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ওইদিন আমি ও ওয়াদুদ মাতুব্বর মনোনয়নপত্র জমা দেই। গত ২৩ এপ্রিল যাচাই-বাছাই শেষে নিজ স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থাকায় বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটানিং কর্মকর্তা। পরে ওয়াদুদ জেলা প্রশাসকের কাছে আপিল করেও তার মনোনয়নপত্রের বৈধতা ফিরে পাননি। এ অবস্থায় গত ১ মে আমাকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবীর। মনোনয়ন ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ওয়াদুদ মাতুব্বর। গত ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের বিচারক এম ইনায়েতুর রহিম ওয়াদুদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন।
এদিকে ওয়াদুদের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন ওহিদুজ্জামান। আজ রোববার শুনানি শেষে ওয়াদুদের প্রার্থিতা বৈধ বলে ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। ওয়াদুদের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন ওহিদুজ্জামান।
ওহিদুজ্জামান বলেন, গত ১৩ মে মনোনয়নপত্র বৈধতা পাওয়ার পর ওয়াদুদের সমর্থকরা সালথায় একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। আমার এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করে। তিনি বর্তমানে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। আমার নেতাকর্মীদের বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।
ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ওয়াদুদ মাতুব্বরের প্রার্থিতার বৈধতা দিয়েছেন। সেখানে আমি লাবু চৌধুরী কি বললাম বা কি করলাম তাতে কিছু যায় আসে না। আমি এমপি হিসেবে কোনো প্রভাব বিস্তার করিনি। তিনি কেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন এটা তার বিষয়।
শাহদাব আকবর বলেন, গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকে আমি আমার এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনো পক্ষ বিপক্ষ আমার কাছে নেই। আমি এলাকায় যাচ্ছি না। বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি।
চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়াদুদ মাতুব্বর বলেন, আমি নির্বাচনে জনগণের রায়ে ভয় পাই না। যারা জনগণকে ভয় পায় তারাই ষড়যন্ত্র করে আমাকে নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে রেখে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চেয়েছিল। তবে তাদের সে আশা পূরণ হয়নি বলেই আজ নির্বাচনের মাঠ থেকে পিছুটান নিয়েছে এবং আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথা বলছে।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়াছিন কবীর বলেন, নির্বাচনের দুই দিন আগে কোনো প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে সরে গেলেও যথারীতি চেয়ারম্যানসহ সব পদে ভোটগ্রহন করা হবে। সে প্রস্তুতি ইতোমধ্যে আমরা সম্পন্ন করেছি।
জহির হোসেন/আরএআর