ফকিরহাটে ওসিসহ দুই পুলিশ কর্মকর্তা বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যানের পক্ষ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি গিয়ে রাতের আধারে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধামকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
পক্ষপাত ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এনে রোববার মোটরসাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ ওয়াহিদুজ্জামান (বাবু) প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এতে তিনি বলেছেন, আমি শেখ ওয়াহিদুজ্জামান, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য 'ফকিরহাট উপজেলা' বাগেরহাটে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। গতকাল ১৮ মে গভীর রাতে ফকিরহাট মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল আলম ও বাগেরহাট জেলার ডিবি ওসি স্বপন রায় আমার একনিষ্ঠ তিনজন কর্মীর বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিপক্ষ প্রার্থীর আনারস প্রতীকের পক্ষে কাজ করার অথবা বাড়ি ছেড়ে যেতে হুমকি-ধামকি দিয়েছেন, যা তাদের পরিবারের সদস্য এবং স্ব স্ব এলাকার সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও নিরপেক্ষ ভোট প্রদানে প্রভাব পড়েছে।
ওই অভিযোগে উপজেলার পিলজংগ (বেড়বাড়ী) গ্রামের এস.এম খলিলুর রহমান, লখপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য হারুন-অর-রশিদ ও একই ইউনিয়নের শেখ রাহিম আহম্মদের বাড়িতে গিয়ে এমন হুমকি-ধামকির প্রদানের সুনিদৃষ্ট অভিযোগ করা হয়। এ অবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রার্থী সেখ ওয়াহিদুজ্জামান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ডিবি ওসি স্বপন রায় মুঠোফোনে বলেন, না, আসলে আসতে পারে। আমরা আমাদের রুটিন ওয়ার্কে গেছিলাম। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বহিরাগত যারা আছে, যাতে কোনো অস্ত্রের ব্যবহার, ওয়ারেন্টের আসামি এ ধরনের রুটিন ওয়ার্কে আমরা ছিলাম। আমরা এবং থানা পুলিশ সবাই। এর বাইরে আমাদের কোনো বক্তব্য নাই।
এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের এলাকায় তারা থাকবে।
লখপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড সদস্য হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। আমার বাড়ি থানা পুলিশ থেকে শুরু করে সবাই চিনে। তারপরও গতকাল গভীর রাতে থানা পুলিশ ও ডিবি মিলে আশাপাশে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে অন্যের বাড়িতে গিয়ে আমার বাড়ি কোথায় এসব খোঁজ নিছে। এভাবে রাত পৌনে ৩টার দিকে তারা আমার বাড়িতে আসে। বাড়িতে আমার ছোট বাচ্চা-স্ত্রীসহ সবাই ভয় পেয়ে গেছে। তারা বলে, তোমরা নির্বাচন করতেছো, এ নির্বাচন এভাবে করা যাবে না। আনারসের (বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বপন কুমার দাস) পক্ষে করতে হবে। তোমরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেছ বলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। অনেক পুলিশ নিয়ে তারা বাসায় এসে হাজির হয়। সবাই ভয় পেয়ে গেছে। আপনিই বলেন, এগুলো কেন? একজন একজনের পক্ষে নির্বাচন করতেই পারে। এ ঘটনায় এলাকার সবাই আতঙ্কিত। আমাদের আরও কর্মীদের বাড়িও এভাবে তারা গেছিল।
পুলিশ ছাড়াও বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-ধামকি দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের পরে দেখায় দেব, স্থানীয় সংসদ সদস্যের পিএস ফিরোজুল ইসলামও পথসভায় হুমকি দিয়ে বলেছেন, মেম্বরি কি করে করো দেখা হবে।
এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজিয়া সিদ্দিকা সেতু বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তো আসলে আমি ব্যবস্থা নিতে পারবো না। আমার কাছে যে অভিযোগ আসছে তা আমি রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর আমার কাছে কোনো নির্দেশনা এলে সেই অনুযায়ী আমি কাজ করবো।
শেখ আবু তালেব/এমএএস