ঘুষ নিতে গিয়ে কনস্টেবল আটকা, ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে উদ্ধার
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লার এক ব্যক্তির বাড়িতে সাদা পোশাকে ঘুষ নিতে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন পুলিশের এক কনস্টেবল। পরে ৯৯৯-এ কল পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘুষ লেনদেনের ভিডিও মুছে ফেলে ওই কনস্টেবলকে ছাড়িয়ে আনেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল শনিবার (১৮ মে) সকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ওই কনস্টেবলের নাম আশিক হোসেন। তিনি আক্কেলপুর থানায় কর্মরত। আর ওই কনস্টেবলকে আটকে রেখেছিলেন শ্রীকৃষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানা ও স্থানীয় লোকজন।
সোহেল রানার ভাষ্য মতে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে জমিজমা নিয়ে একটি অভিযোগের তদন্ত করতে একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) সঙ্গে কনস্টেবল আশিক হোসেন শ্রীকৃষ্টপুর মহল্লায় এসেছিলেন। তখন ওই কনস্টেবল বিবাদী পক্ষের সোহেল রানার কাছে এক হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওইদিন সোহেল রানা কনস্টেবলকে কোনো টাকা-পয়সা দেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কনস্টেবল আশিক সোহেল রানাকে তার মা ও স্ত্রীর সামনে গালিগালাজ করে হুমকি দিয়ে চলে যান। ঘটনার দুই দিন পর রাতে একটি সড়কে সোহেল রানাকে পেয়ে ওই কনস্টেবল পকেট তল্লাশি করে ইয়াবা পান। তখন তাকে ছেড়ে দেওয়ার শর্তে ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। সোহেল রানা পর দিন সকালে ঘুষের টাকা দেবেন বলে সেখান থেকে চলে আসেন। কনস্টেবল আশিক পর দিন সকালে ঘুষের টাকা নিতে সোহেল রানার বাড়িতে এসে ডাকাডাকি করে তাকে পাননি। এতে ক্ষুব্দ হয়ে বাড়ির দরজায় লাথি দিয়ে চলে যান।
এরপর কনস্টেবল আশিক সোহেলের মুঠোফোনে কল করে তাকে গালিগালাজ করে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন। সোহেল রানা তাকে ঘুষের টাকা দেবেন বলে আশ্বস্ত করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। পরে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে কনস্টেবল আশিক হোসেন সোহেল রানার বাড়িতে আসেন। তিনি সোহেল রানার কাছে ঘুষের ২০ হাজার টাকা চান। একপর্যায়ে সোহেল রানা কনস্টেবলের হাতে ৫ হাজার টাকা দেন। এই ঘটনাটি সোহলের স্ত্রী মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করেন। কনস্টেবল ভিডিও ধারণের কথা জানতে পেরে টাকা ফেরত দিয়ে দ্রুত পালানোর চেষ্টা করলে সোহেল ওই কনস্টেবলকে তার বাড়িতে আটকে রেখে ৯৯৯-এ কল করেন। পুলিশকে আটকে রাখার খবর পেয়ে উৎসুক গ্রামবাসী সেখানে জড়ো হন। সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফেরদৌস হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ সোহেল রানাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুঠোফোনে থাকা ঘুষ লেনদেনের ভিডিও মুছে ফেলে আটক থাকা কনস্টেবলকে নিয়ে যান।
তবে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টের কাছে অস্বীকার করেছেন কনস্টেবল আশিক হোসেন। তার দাবি-সোহল রানা একজন মাদক ব্যবসায়ী। তাকে চিহ্নিত করতে সকালে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ কারণে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল।
আক্কেলপুর পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফেরদৌস হোসেন বলেন, সোহল রানার বাড়িতে সিভিল পোশাকে একজন কনস্টেবলকে আটকে রাখা হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে কনস্টেবলকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কল করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কলটি কেটে দেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদ রানা। পরে তিনি আর কল রিসিভ করেননি। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নয়ন হোসেন বলেন, আমি ছুটিতে আছি। তবে জেনেছি যে, মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে বাগবিতণ্ডার ঘটনায় এমন ঘটেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন স্যারকে জানানোর পর ওই কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
চম্পক কুমার/আরএআর