সবার ভালোবাসায় সিক্ত প্রকৌশলী তৌফিক, পরিবারে আনন্দের জোয়ার
সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী মো. তৌফিকুল ইসলাম খুলনায় পৌঁছেছেন। বুধবার (১৫ মে) সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি নগরীর করিমনগরের বাড়িতে এসে পৌঁছান। তার আগমনে আনন্দের জোয়ার বইছে পরিবার ও এলাকাজুড়ে। তৌফিককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে বাড়িতে ছুটে আসেন এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজন। করিমনগর উদ্যোক্তা পরিষদের পক্ষ থেকেও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
এ সময় আবেগঘন পরিবেশের তৈরি হয়। দীর্ঘদিন পর বাবাকে কাছে পেয়ে সরতে চাইছে না তার দুই শিশু সন্তান। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তৌফিকের আগমনে যেন ঈদের আনন্দ ফিরে এসেছে তাদের মাঝে।
তৌফিকুল ইসলাম খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ২০/১ করিমনগর এলাকার মো. ইকবাল এবং দিল আফরোজ দম্পতির ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
তৌফিকের পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ি থেকে গত ২৫ নভেম্বর জাহাজে গিয়েছিলেন মো. তৌফিকুল ইসলাম। আজ তৌফিকের আগমনে দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। তারা সরকার এবং জাহাজ মালিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার তৌফিকুল ইসলামের বাবা ইকবাল হোসেন, মা দিল আফরোজ, স্ত্রী জোবায়দা নোমান এবং দুই সন্তান তাসফিয়া তাহসিনা (৭) ও আহমেদ রুসাফি (৫) তাকে ফিরে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন।
প্রকৌশলী তৌফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফিরে এসে সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অনেক ভালো লাগছে। এত দ্রুত সময়ের মধ্যে কোম্পানি আমাদেরকে ছাড়িয়ে এনেছে এ জন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। সরকার অনেক সহযোগিতা করেছে। তা না হলে এক মাসের মধ্যে ফিরে আসার নজির নেই।
জলদস্যুদের কবলে পড়ে শুরুর ঘটনার বর্ণনায় তৌফিক বলেন, আমরা যে পরিস্থিতিতে ছিলাম সেটি পরিবার দেখেনি, এ জন্য তারা বেশি চিন্তিত ছিল। আলহামদুলিল্লাহ পরিবারের কাছে আসতে পেরেছি, এখন তারা ঠিক আছে।
তিনি আরও বলেন, যখন আমরা ধরা পড়ি তখন মাথা কাজ করছিল না। কী ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে জানা ছিল না। তখন পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। বললাম মাফ করে দিও, সবাইকে মাফ করি দিতে বইলো। কারণ কোন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে জানতাম না। ২০০৮ সাল থেকে আমরা জাহাজে চাকরি করছি। এই রুটে অনেকবার যাওয়া-আসা করেছি, কিন্তু কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি।
আরও পড়ুন
ঢাকা পোস্টকে তৌফিক বলেন, জলদস্যুদের কবলে থাকাকালীন রমজান মাস ছিল। রমজানে আমাদের তারা রোজা রাখতে দিয়েছে। আমাদের ক্যাপ্টেন খুবই বিচক্ষণ ছিল, তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। তার বিচক্ষণতার কারণে আমরা সুষ্ঠুভাবে ফিরে আসতে পেরেছি। তার অনেক বড় অবদান। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
জিম্মি থাকাকালীন কিছু ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, কিছুটা কমেডিয়ান ছিল। ওদের নাম ধরে আমরা ডাকতাম না। ওদের তিন-চারজন ছিল যারা সব সময় আমাদের নজরে রাখত। ওদের মধ্যে তিনজনের ছদ্মনাম দিয়েছিল ক্যাপ্টেন স্যার। একজনের নাম দিয়েছিল শান্টু, আরেকজনের নাম সেন্টা। সে নিজের জিনিস নিজে লুকিয়ে রেখে আবার খুঁজত। আরেকজনের নাম দিয়েছিল উটপাখি। দেখতে উটপাখির মতোই। কিন্তু সবাই যখন আমাদের ফেস করত তখন অনেক ভয় লাগত। তবে তারা ঈদে আমাদের খোলা জায়গায় নামাজ আদায় করতে দিয়েছিল।
তৌফিকের মা দিল আফরোজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আল্লাহর রহমতে ছেলে ফিরে এসেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। আজকে আমাদের ঈদের দিন। আমার ছেলে মায়ের কোলে ফিরে এসেছে। স্ত্রীর কাছে, সন্তানের কাছে ফিরে এসেছে-এটাই বড় পাওয়া। ছেলের পছন্দের গরুর কালাভুনা রান্না করা হয়েছে। এ ছাড়া তার পছন্দের সবই রান্না করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৌফিকের মা।
তৌফিকের স্ত্রী জোবাইদা নোমান বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর কাছে লাখ-কোটি শুকরিয়া, ফিরে পেয়েছি সবকিছু। ফিরে আসার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। পেছনের যে দিনগুলো চলে গেছে সেগুলো মনেও করতে চাই না। সবার কাছে একটাই দোয়া এরকম দিন কারও জীবনে যেন না আসে।
প্রকৌশলী তৌফিকের শ্যালক শিববিন মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকলের সহযোগিতা এবং দোয়ায় তৌফিককে আমরা ফিরে পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগছে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সোমালিয়ার জলদস্যুরদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক দেশের মাটিতে পা রাখেন। তারা ‘এমভি জাহান মণি’ জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দর জেটি এলাকায় আসেন।
প্রসঙ্গত, মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার দস্যুরা ২৩ নাবিকসহ এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজটি জিম্মি করে।
এমজেইউ