বাঘের পর এবার কুমিরের মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন মৌয়াল
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামে কুমিরের মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন আবদুল কুদ্দুস (৫৫)। সোমবার (১৩ মে) তাকে নিয়ে লোকালয়ে ফিরেছেন তার ছোট ভাই আবদুল হালিম।
এর আগে ১১ মে দুপুরে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া নদীতে গোসল করার সময় কুমিরের আক্রমণের শিকার হন আবদুল কুদ্দুস। তিনি বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের মৃত মোকছেদ সানার ছেলে।
২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন আবদুল কুদ্দুসসহ ৭ জনের একটি দল।
আবদুল কুদ্দুসের ছোট ভাই আবদুল হালিম বলেন, শুরুতে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। ফলে খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। তবে কুমিরের লেজ দেখে জীবনের মায়া ভুলে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
ভাইকে বাঁচাতে চিৎকার করে দলের অন্য চার সদস্য বক্স গাজী, শহিদুল, সিরাজুল ও এলাই বক্সের সহযোগিতা চান। এক পর্যায়ে সবাই মিলে আবদুল কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি এবং পানিতে প্রচণ্ড শব্দ তৈরি করি, এতে করে কুমিরটি শিকার ছেড়ে চলে যায়।
মৌয়ালদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৭-৮ দিন আগে বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে মধু সংগ্রহের পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে সুন্দরবনে ঢোকেন ছয় মৌয়াল। তাদের দলে ছিলেন দুই ভাই আবদুল কুদ্দুস ও আবদুল হালিম। ঘটনার দিন অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি চাক পাওয়ায় সবাই খোশমেজাজে ছিলেন। এক পর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে কলাগাছিয়া নদীর চরে হাঁটুপানিতে নেমে গোসল করার সময় এ ঘটনা ঘটে।
ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘কুমির যখন আমার হাত কামড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, আমি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলি। কুমির ঘুরপাক খেতে থাকায় আমিও সমানতালে পানিতে ডুবে গিয়ে আবার ভেসে উঠি। নিঃশ্বাস নিতে না পারায় দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় আর কিছু মনে নেই।’
মৌয়াল সিরাজুল ইসলাম বলেন, কুমির চলে যাওয়ার পর আবদুল কুদ্দুসকে ডাঙায় নিয়ে সরিষার তেল ও আগাছা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে রক্ত বন্ধ করি। ঝড়ের কারণে দেরিতে বাড়ির উদ্দেশ্যে মৌয়ালরা রওনা হন। তাই সোমবার রাতে তারা লোকালয়ে পৌঁছান।
এ বিষয়ে সুন্দরবনের সহকারী বন সংরক্ষক এ কে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, গত পাঁচ বছরে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে কুমির ও বাঘের আক্রমণে আহত হন দুইজন।
সুন্দরবনে গিয়ে বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণী থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে মৌয়ালদের সতর্ক করা হয়। তিনি বলেন, বৈধভাবে এসব ব্যক্তি মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে যান। চিকিৎসা নিয়ে এলাকায় ফিরে আবেদন করলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে সরকারি সহায়তার জন্য আহত মৌয়ালের নাম প্রস্তাব করা হবে।
মোহাম্মদ মিলন/আরকে