চাঁদপুরে এক কেজি ইলিশের দাম ২৩০০ টাকা
জাটকা রক্ষায় দুই মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও চাঁদপুরে মেঘনা নদীর তীরে মৎস্য আড়তগুলোতে ইলিশ বেচাকেনা শুরু হয়েছে। জেলেরা ইলিশসহ বিভিন্ন মাছ নৌকা ও ট্রলারে করে নিয়ে আসছে ইলিশের বাণিজ্যিক বন্দর খ্যাত চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে।
প্রতি বছর সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখানে থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ইলিশ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়। তবে এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রায় ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে চাঁদপুর মাছঘাট। এর আগে নিষেধাজ্ঞার সময় পুরো দুই মাস চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশ বেচাকেনা, সরবরাহ ও পরিবহন নিষিদ্ধ ছিল।
বুধবার (১ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ আড়তই ফাঁকা পড়ে আছে। আড়তের পাশে বসে কিছু খুচরা ব্যবসায়ী অল্প কিছু ইলিশ বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছেন। অলস সময় কাটাচ্ছেন আড়তের কর্মচারীসহ অন্যান্য মৎস্য শ্রমিকরা। আজ ৮-১০ মণ ইলিশ সরবরাহ হয়েছে বলে জানান তারা।
ঘাটের আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃষ্টি না হওয়া এবং নদীর পানি কমে যাওয়ায় জেলেরা নদীতে মাছ পাচ্ছেন না। তবে জুন-জুলাই মাসে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ পাওয়া যাবে।
ক্রেতারা জানান, তারা ঘাটে এসেছেন ইলিশ নেওয়ার জন্য। কিন্তু ইলিশ কম থাকায় দাম অনেক বেশি। কেউ বেশি দাম দিয়ে মাছ কিনছেন। আবার অনেক ক্রেতাকে খালি হাতে ফিরছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্ম-মেঘনা নদীতে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর আজ (১ মে) ইলিশ বেচাকেনার প্রথমদিনে চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশের আমদামি একেবারই কম। আজ প্রায় ১০ মণ মাছ আমদানি হয়েছে। তবে বেশির ভাগ মাছই ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের। এই ঘাটে ৩০০-৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৪০ হাজার টাকা, ৫০০ গ্রামের ওপর থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৫৬ হাজার টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি মণ প্রায় ৮০ হাজার টাকা ও ১২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ১ লাখ টাকায় পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে।
কুমিল্লা থেকে আসা ক্রেতা খোকন বলেন, গতকাল জাটকা রক্ষার অভিযান শেষ হলো। তাই আজ মাছ কিনতে আসলাম । কিন্তু মাছের যেই দাম। তাই আর মাছ কেনা হলো না।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ক্রেতা মনির বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে চাঁদপুর ঘাটে এসেছি ইলিশ মাছ কেনার জন্য। ঘাটে মাছ কম, দাম বেশি। আমরা প্রায় ১ কেজি ওজনের দুটি মাছ কিনেছি। দাম ৩২০০ টাকা নিয়েছে।
ঢাকা থেকে আসা আরেক ক্রেতা সানাউল্লাহ বলেন, মাছের অতিরিক্ত দাম। তাই মাছ কেনা সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় সাংবাদিক মনিরুজ্জামান বাবলু বলেন , আশা করেছিলাম ঘাটে অনেক মাছ উঠবে। কিন্তু মাছের অনেকটা সংকট দেখছি। ব্যবসায়ীরা বলছেন আরও কয়েকদিন পর মাছের দাম অনেক কমবে। তাই এখন আমি মাছ নেব না। মাছের দাম কমলে কিনব। তখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাছ খাব।
মাছ ব্যবসায়ী নবীর হোসেন বলেন, জাটকা রক্ষায় দুই মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ চাঁদপুর মাছ ঘাটে ৮ মণ ইলিশ এসেছে। এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২৩০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ২১০০ টাকা কেজি, ৫০০-৬০০ গ্রামে ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
আড়তদার কামাল বলেন, নিষেধাজ্ঞার দুই মাস পর ইলিশ বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিনে মাছ তেমন একটা নেই। কারণ নদীতে পানি না থাকার কারণে ইলিশের দেখা মিলছে না। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানির স্রোত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে মাছ পাওয়া যাবে। মাছ কম থাকায় এখন দাম অনেক চড়া। নদীর পানি বাড়লে মাছ বৃদ্ধি পাবে। তখন মাছের দাম কমবে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিষেধাজ্ঞার দুই মাস পর আজ ইলিশ বেচাকেনা শুরু হয়েছে। আজকে ঘাটে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ আসার কথা। ১০ মণ মাছও আসেনি।
তিনি আরও বলেন, জাটকা রক্ষার অভিযান কতটুকু সফল হয়েছে বোঝা যাবে আরও দুই মাস পর। কারণ ইলিশ মাছ চাঁদপুরের নদীতে আসে আবার চলে যায়। ইলিশ মাছ ভরা মৌসুমে চাঁদপুরের নদীতে আসে। তখন বুঝা যাবে অভিযান কতটুকু সফল হয়েছে। তাছাড়া ডুবোচরের কারণে নদীতে পানি অনেক কম।
আনোয়ারুল হক/আরএআর