জাবিতে ভর্তির অনিশ্চয়তা কাটলো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দিদারের
অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দিদারুল ইসলামের। তবে থেমে থাকেননি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার মেধাবী এই তরুণ। চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। মেধার স্বাক্ষর রেখে এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৫৯তম হয়েছেন। তবে দিনমজুর বাবা তার ভর্তির টাকা যোগান দিতে পারছিলেন না। এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে দিদারের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি।
এ নিয়ে ঢাকা পোস্টে ‘টাকার অভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দিদারের জাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর দিদারের পাশে দাঁড়িয়েছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনসহ অনেকেই। এতে কেটে গেছে তার অনিশ্চিয়তার মেঘ। হাসি ফুটেছে দরিদ্র পরিবারে।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দিদারের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা হিসেবে ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আরিফুল হক মৃদুল।
এদিকে সোমবার প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিদারের পাশে দাঁড়াতে সমাজকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আলী ইউসুফ নিজের ফেসবুকে পোস্ট করে দিদারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তাতে সাড়া দিয়ে টাকা পাঠিয়েছেন কয়েকজন। বুধবার সেই অর্থ সহায়তা দিদারের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানান আলী ইউসুফ।
তিনি বলেন, চোখে দৃষ্টি না থাকলেও পড়ালেখা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েও সামান্য টাকার জন্য তা ভেস্তে যাবে এটা হতে পারে না। অসহায় দিদারের পাশে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
একইসঙ্গে আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা নাজমুল হোসেনও দিদারের ভর্তিতে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। নাজমুল বলেন, ময়মনসিংহ সদর আসনের সংসদ সদস্য মোহিত উর রহমান শান্ত ও আনন্দ মোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মেধাবীদের এগিয়ে নিতেই কাজ করে ছাত্রলীগ।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দিদারুল ইসলাম বলেন, আমার দিনমজুর বাবা টাকার যোগান দিতে পারছিলেন না। এদিকে ভর্তির সময়ও ঘনিয়ে আসছিল। এ নিয়ে তাই চিন্তিত ছিলাম। তবে ঢাকা পোস্টের সংবাদের পর অনেকেই সহযোগিতা করেছেন। এতে আমার ও পরিবারের দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে।
বাংলা বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া দিদার বলেন, আমার স্বপ্ন শিক্ষা ক্যাডার হওয়ার। শিক্ষক হয়ে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে চাই।
দিদারুল ইসলাম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাধাকানাই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের দিনমজুর আইয়ুব আলীর ছেলে। আইয়ুব দিনভর মানুষের জমিতে কাজ করে রাতে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে নৈশ্যপ্রহরীর কাজ করেন।
দিদারুল ইসলাম ২০২১ সালে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল ময়মনসিংহ নগরীর অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি ও ২০২৩ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। দুটি পরীক্ষাতেই মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেন তিনি। দিনমজুর বাবার দুই সন্তান দিদারুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন। তারা দুজনেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনে। দিদার এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৫৯ তম হয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
উবায়দুল হক/আরএআর