টাকার অভাবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী দিদারের জাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত
সমাজের অন্য আর দশজনের মতো দেখতে মনে হলেও তাদের মতো স্বাভাবিক নন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার তরুণ দিদারুল ইসলাম। জন্ম থেকেই তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তবে তিনি শিক্ষার আলোয় নিজেকে উজ্জ্বল করেছেন। অদম্য মেধাবী দিদার এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৫৯তম হয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু অর্থাভাবে সেই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত রোববার থেকে ভর্তি শুরু হলেও তার ভর্তির টাকার জোগান হয়নি। তাই তার ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
দিদারুল ইসলাম ফুলবাড়িয়ার রাধাকানাই ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের দিনমজুর আইয়ুব আলীর ছেলে। আইয়ুব দিনভর মানুষের জমিতে কামলা দিয়ে রাতে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন।
২০২১ সালে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল ময়মনসিংহ নগরীর অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি ও ২০২৩ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন দিদারুল ইসলাম। দুটি পরীক্ষাতেই মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ অর্জন করেন তিনি। দিনমজুর বাবার দুই সন্তান দিদারুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন। তারা দু’জনেই জন্মান্ধ। ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে অ্যাডওয়ার্ড ইনস্টিটিউশনে। বাবার কষ্টের অর্থকে বৃথা যেতে দেননি দিদার। তিনি এবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
দিদারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যে কোনো শিক্ষার্থীর জন্যই একটি চ্যালেঞ্জিং অভিজ্ঞতা, তবে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য এটি আরও বেশি কঠিন। আমি জন্মগতভাবেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আমাকে দেখতে আর দশজন ছেলেমেয়ের মতোই স্বাভাবিক লাগলেও খুব কাছের জিনিস মৃদু দেখা ছাড়া দূরের কিছুই দেখতে পেতাম না। পরিবার চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন ধীরে ধীরে আমার চোখের আলো আরও কমে যাবে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্বাভাবিক স্কুলে পড়ি। একদম বইয়ের সঙ্গে মাথা লাগিয়ে পড়তে হতো, তাও ছোট লেখা পড়তে পারতাম না। তারপর চিকিৎসকের পরামর্শে ২০১৬ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অ্যাডওয়ার্ড স্কুলে ভর্তি হই। সেখানে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ালেখা করি।
তিনি বলেন, জীবনের পথে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। ছোটবেলা থেকেই আমার দৃষ্টিশক্তি কম ছিল। তবুও আমার পরিবার, শিক্ষক এবং বন্ধুদের সহযোগিতায় আমি সবসময় সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও আর্থিক সংকটের কারণে ভর্তি অনিশ্চিত। ভর্তির জন্য ১৬ হাজার টাকার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক খরচের জন্য টাকা প্রয়োজন।
মা বেদেনা খাতুন বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার পরামর্শ দেন পড়ালেখা করালে ছেলের ভবিষ্যৎ ভালো হবে। তাই নিজেরা কষ্ট করে দুই ছেলেকে পড়াচ্ছি। বড় ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় আনন্দ হলেও তাকে ভর্তি করাতে পারব কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
দিদারের বাবা আইয়ুব আলী বলেন, অন্যের জমিতে রোজের কামলা দেই। আমার দুই ছেলেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। চোখের কাছে নিয়ে দেখতে ও পড়তে হতো এমন অবস্থা থেকে ৫-৬ বছর বয়সে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায়- সে ধীরে ধীরে আর চোখে দেখবে না। ময়মনসিংহ ও ঢাকায় চিকিৎসা করানো হলেও আর চোখের আলো ফেরেনি। তিনি আরও বলেন, ছেলের ভর্তির শেষ তারিখ ২৮ এপ্রিল। আশপাশের আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকের কাছে টাকা ধার চেয়েছি, সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু এখনো টাকার জোগান হয়নি। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, অর্থের অভাবে এমন অদম্য মেধাবী ভর্তি হতে পারবে না তা হতে পারে না। ছেলেটির জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যা করণীয় তা করা হবে।
উবায়দুল হক/আরএআর