দাবদাহে ঝরছে আমের গুটি, চাষিদের দুশ্চিন্তা
বৃষ্টিপাত না হওয়ায় তাপমাত্রা বেড়েছে রাজশাহীতে। এর ফলে বোটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। পানির সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগেও চাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে আসছে না স্বস্তি। একে তো গাছে কম আম, তার ওপর ঝরে পড়ছে। সবমিলিয়ে এক ধরনের লোকসানের আশঙ্কা চাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে।
চাষিদের দাবি প্রতি বছর আমের গুটি ঝরে। যাকে সাধারণ গুটি ঝরা ধরা হয়। কিন্তু এ বছর সাধারণের চেয়ে বেশি আমের গুটি ঝরছে খরায়। তাদের ধারণা ইতোমধ্যে অনেক বাগানে ১০ থেকে ১৫ ভাগ আমের গুটি ঝরে গেছে খরার কারণে।
আম গবেষণা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৯ মার্চ রাত ২টা থেকে পরের দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০ মিলিমিটার। তার আগে ৪ মার্চ এক মিলিমিটার ও পরের দিন তিন মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এই সময়গুলোতে আমের গাছগুলোতে মুকুল ছিল। বৃষ্টির আগে শুষ্ক আবহাওয়া ও বৃষ্টির পরে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার এক-দুই দিন পর রোদ উঠে। এই রোদে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। এই ধকলের পর শুরু হয়েছে খরা। খরার কারণে এখন ঝরছে গাছে অবশিষ্ট থাকা আমের গুটি।
আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, রাজশাহী জেলার বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া, দুর্গাপুরে সবচেয়ে বেশি আমের চাষ হয়। এ বছর এসব উপজেলার আমের বাগানগুলোতে মুকুল কম এসেছে। বেশির ভাগ গাছে নতুন পাতার জন্ম হয়েছে। এ ছাড়া অনেক গাছে নতুন পাতা না এলেও মুকুল আসেনি। যদিও সেই গাছগুলোতে গেল বছর আম এসেছিল। কিন্তু এ বছর নেই। আবার যে গাছগুলোতে আমের মুকুল ছিল সেগুলো আবার গুটিতে ঝরে গেছে। গুটি ঝরা ঠেকাতে সেচ দিচ্ছেন অনেকেই।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। আর গতবার ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল।
আমচাষি হাসান আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, তার তিনটি বাগানে ৭৫টি আমের গাছ রয়েছে। তার মোট গাছের তিন ভাগের একভাগ গাছেও আম নেই। তার দাবি এ বছর মুকুল আসেনি। তারপরও যে কয়েকটা গাছে মুকুল ছিল, তাও আবার ঝরে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে এ বছর আমের উৎপাদন কম হবে।
বৈরী আবহাওয়ায় আমের গুটি ঝরে পড়ার দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে আমচাষি আব্দুস সালাম বলেন, আমের জন্য এ সময় বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে আশা করা যায় আমের গুটি ঝরা বন্ধ হয়ে যাবে। তা না হলে তীব্র তাপে গাছের আমের আরও বেশি গুটি ঝরে যাবে। গাছ থেকে স্বাভাবিক আমের গুটি ঝরে। কিন্তু বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আমের গুটি ঝরছে। তার হিসাবে গাছের ১০ থেকে ১৫ ভাগ আমের গুটি ঝরে গেছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার আম কম হবে। বিগত বছরের তুলনায় আমের মুকুলও কম ছিল। এ বছর মুকুলে ফুল ফুটার সময়ে গত ২০ মার্চ বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ফলে আমের অনেক মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। যেহেতু গেল বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছিল তাই এই বছর বেশির ভাগ গাছে নতুন পাতা এসেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছর আমের ভালো ফলন হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু তাপমাত্রা বেশি তাই আমের গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তাহলে আমের গুটি ঝরা রোধ হয়ে যাবে। এতে কিছুটা হলেও উপকার পাওয়া যাবে সেচ দিয়ে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, খরার কারণে আমের গুটি ঝরতে পারে। আমচাষিদের আম গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবার (১৭ এপ্রিল) রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। আর আজ বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি। আর দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।
আপাতত কয়েক দিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বলে জানান পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম।
শাহিনুল আশিক/এমজেইউ