ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের পরিচয় মিলেছে
ঝালকাঠিতে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের চাপায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশার ১৪ যাত্রী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে আরও ১৫ জন। নিহতদের দেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ২টায় ঝালকাঠি শহরতলীর খুলনা-বরিশাল মহাসড়কের গাবখান সেতুর পূর্ব টোল প্লাজায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়। ঘাতক ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা, পঙ্গুত্বের শিকারদের তিন লাখ টাকা ও আহতদের এক লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম। ঘটনার পর প্রায় একঘন্টা সড়কে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর বেলা সাড়ে তিনটার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, বরিশালে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছিল ওই প্রাইভেটকার এবং অটোরিকশাগুলো। দুপুর ২টারদিকে গাবখান টোলপ্লাজায় টোল দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল একটি এ চারটি যানবাহন।
এসময় দ্রুতগতিতে আসা একটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলোকে চাপা দেয়। এতে দুমড়ে মুচড়ে যায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলো এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হন অটোরিকশার ৬ যাত্রী। পরে প্রাইভেটকার থেকে আরো ৮ যাত্রীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাদের মৃত্যু হয়। ১৪ জনের মধ্যে শিশু রয়েছে ৪ জন, নারী ৩ জন ও পুরুষ ৭ জন। নিহতদের বাড়ি রাজাপুর, ভান্ডারিয়া ও কাঁঠালিয়া উপজেলায়। সড়ক দুর্ঘটনায় এমন মৃত্যু দেখে হতবাক স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শী গাবখান টোলের কর্মী আবুল বাশার (৫০) বলেন, প্রাইভেটকার ও তিনটি ব্যাটারীচালিত অটো টোল দেয়ার জন্য অল্পগতিতে ছিল। হঠাৎ করে পশ্চিম দিক থেকে আসা দ্রুত গতির ট্রাকটি প্রাইভেটকার ও অটোকে চাপা দিলে কার ও অটোগুলো দুমড়ে মুচড়ে যায়। মুহুর্তোর মধ্যে কি হয়ে গেল বুঝলাম না। শুধু রক্ত আর কান্না।
তিনি আরও বলেন আমার ধারণা ট্রাকের ব্রেক ফেল করেছিল। এ কারণে টোলপ্লাজায় ব্রেক না করেই সরাসরি প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাকে চাপা দিয়ে যাওয়ার চেস্টা করে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, মোট ১৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে প্রাইভেট কারে একই পরিবারের ছিল ৬ জন, হাসপাতালে নেওয়ার পরে মারা যায় ৪ জন এবং ঘাতক ট্রাকের ধাক্কায় উল্টে যাওয়া অপর ট্রাকের মধ্য থেকে ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন মারা যায়। পরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আরো একজন মারা যায়।
এই কর্মকর্তা আরও জানান, ঘাতক ট্রাকটি সেতু থেকে নামার সময় নিয়ন্ত্রন হারিয়ে এ দূর্ঘটনা ঘটায়।
হাসপাতাল ও পুলিশ সুত্রে নিহত যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন, একই পরিবারের ৬ জন রাজাপুর উপজেলার সাউথপুর গ্রামের হাসিবুর রহমান (৩২), স্ত্রী নাহিদা আক্তার (২৭), তাঁদের সন্তান তাকিয়া (সাড়ে চার বছর), তাহমিদ (১বছর ), সদ্য বিবাহিত ইমরান (২৬) ও তাঁর স্ত্রী রিপা (২২) রাজাপুরের উত্তমপুর গ্রামের ইব্রাহিম ফকির (৩০) (প্রাইভেট কারের চালক), ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫), ওস্তাখান গ্রামের শফিকুল মাঝি (৫০) নওয়াপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান সাদিক (১১), কাঁঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়া গ্রামের নুরজাহান (৭) ও তহমিনা (২৫), স্বরুপকাঠির রুহুল আমিন, গাবখানের ভিক্ষুক শহিদুল ইসলাম (৪৫)।
ঝালকাঠি থানার ওসি মোঃ শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা এখন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে লাশের সুরতহাল তৈরি করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কাজ করা হয়েছে। উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে এবং প্রত্যাক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে মামলা দায়ের করা হবে।
প্রতিনিধি/ এসএমডব্লিউ