অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছেন মৃৎশিল্পীরা
বাংলা বর্ষের প্রথম মাস বৈশাখ। আর এই মাসকে উদযাপন করতে আবহমান বাংলায় মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। মেলার একটি বড় অংশজুড়ে থাকে মৃৎশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন দৈনন্দিন ব্যবহারের আসবাবপত্র। আর এসব আসবাবপত্র তৈরিতে চৈত্রের শুরু থেকে ব্যস্ততা দেখা যেত কুমার পরিবারগুলোতে। বৈশাখী মেলায় তাদের কারুকার্যে ফুটে উঠত বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য। ভালো বিক্রি হওয়ায় স্বপ্ন ছুঁতে পারতেন তারা।
আধুনিকতা ছোঁয়ায় পরিবর্তনে এসেছে মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহার্য আসবাবপত্রে। তাই আর আগের মতো বৈশাখ ঘিরে কুমারদের কর্মব্যস্ততা নেই। তবু পূর্বপুরুষদের এই পেশা টিকিয়ে রাখতে সংগ্রাম করছে বেশ কিছু পরিবার।
ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের পাল পাড়ায় একসময় মাটির জিনিসপত্র বানাতে ব্যস্ততা দেখা যেত। কিন্তু এখন আর তা নেই। যে কয়েকটি পরিবার এ পেশা ধরে রেখেছে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ জেনে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। তাই অপরিহার্য মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
কালের বিবর্তনে যেমন অনেক কিছুতে পরিবর্তন এসেছে, ঠিক তেমনি পরিবর্তনে এসেছে একসময়ের মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, সানকি, ঘটি, মটকা, সরা, চারি, কলস, প্রদীপ, ব্যাংক, প্রদীপ, পুতুল, কলকি, ছোটদের খেলনার হাতি, ঘোড়া, দেবদেবীর মূর্তিতেও।
মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলেন, প্লাস্টিকের খেলনা, আসবাবপত্র বের হওয়ার পর মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেছে। আগে বৈশাখী মেলার জন্য আমাদের চৈত্র মাসজুড়ে ব্যস্ততা থাকত। বাপ-দাদার সময় থেকে এই পেশার সঙ্গে জড়িত থাকলেও বাধ্য হয়ে অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সহযোগিতা চান এই পেশায় জড়িতরা। তারা সরকারিভাবে ঋণ দেওয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অন্য জায়গার মতো ঠাকুরগাঁওয়ের মৃৎশিল্পও রুগ্ন অবস্থায় রয়েছে। মাটির তৈরি পণ্যগুলোতে কীভাবে আরও চাকচিক্য আনা যায়, সেজন্য এ পেশায় প্রশিক্ষণসহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহজে কীভাবে ঋণের আওতায় আনার ব্যবস্থা করার কথা জানান তিনি।
আরিফ হাসান/এসএসএইচ