সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে পাহাড়ে বিঝু-বিষু উৎসব শুরু
পাহাড়ে ঐতিহ্যগত চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের প্রাাণের উৎসব বিঝু ও বিষু। সাঙ্গু নদীতে ‘জলবুদ্ধ’ও ‘মা’ গঙ্গাকে ফুল বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব বিঝু ও বিষু শুরু হয়েছে।
উৎসব উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে জেলার ঐতিহ্যবাহী সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ।
উৎসবকে কেন্দ্র করে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের লোকজন গতকাল বৃহস্পতিবার (১২ এপ্রিল) নদীতে ফুল ভাসিয়ে পূজা শেষে নিজেদের ঘরবাড়ি ফুল দিয়ে সাজায়।
ঘরে ঘরে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়। একে অপরের বাড়িতে নিমন্ত্রণে যান তারা। ঘনিষ্ট আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার মুরব্বিদেরকে ঘরে এনে খাওয়ানো হয়। শত প্রকার সবজি, মাছ, শুঁটকি দিয়ে তৈরী করা হয় পাচন তরকারি, যা চাকমাদের খাবারের মূল আকর্ষণ।
১৪ এপ্রিল বয়ো মুরব্বিদেরকে গোসল করিয়ে তরুণ-তরুণীরা তাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করে থাকেন। বাড়িতে বাড়িতে ভিক্ষু সংঘকে ফাং (নিমন্ত্রণ) করে বাড়ির লোকজনের মঙ্গলের জন্য মঙ্গল সূত্র শ্রবণ করা হয়।
সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসাতে আসা হ্যাপি চাকমা বলেন, পুরাতন বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো এবং আগামী বছরও ভালো থাকার জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করে জলবুদ্ধ ও মা গঙ্গাকে ফুল দিয়ে পূজা করতে এসেছি সাঙ্গু নদীতে।
আরেক তঞ্চঙ্গ্যা নারী বলেন, নদীতে ফুল দিয়ে পূজা করা আমাদের ঐতিহ্য। প্রতি বছর ১২ এপ্রিল তিন পার্বত্য জেলায় ১১টি সম্প্রদায় উৎসবমুখর পরিবেশে বিষু উৎসব পালন করে থাকি। জলবুদ্ধকে ও মা গঙ্গাকে ফুল দিয়ে পূজা করে নিজের ও পরিবারের মঙ্গলের জন্য নদীতে ফুল নিবেদন করি। সুন্দর আগামী দিনের প্রত্যাশা করি।
এদিকে এবারে বান্দরবানে সার্বিক প্রেক্ষাপটে বিঝু, বিষু, সাংগ্রাই, বৈসু, বৈসাবি উৎসব পালন কিছুটা সংকীর্ণ করা হয়েছে। গত ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচি উপজেলায় কেএনএফ কর্তৃক ব্যাংক ডাকাতি ও অস্ত্র লুটের ঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলছে পাহাড়জুড়ে। ঘটনার পর থেকে রুমা, থানচি ও রোয়াংছড়ি দুর্গম এলাকাগুলোতে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই বৈসাবি উৎসব উৎসবমুখর পরিবেশে পালনে কিছুটা প্রভাব পড়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
তবে উৎসবকে ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা জোরদারসহ বাড়তি সতর্কতা মূলকব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবানের পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন।
শহীদুল ইসলাম/আরএআর